ঘূ’র্ণিঝড় ‘অশনি’। পার্শ্ববর্তী দেশসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর পূর্বাভাসে অশনির লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশ। বাস্তবে বাংলাদেশকে দেখা হয়নি আন্দামানে সৃষ্ট হওয়া ঘূ’র্ণিঝড়টির। আবহাওয়াবিদদের আশঙ্কা ছিল চলতি বছরের সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূ’র্ণিঝড় হবে এটি। কিন্তু সাগরেই শক্তি হারিয়ে নামের সঙ্গে সুবিচার করতে
পারেনি অশনি। এই প্রসঙ্গে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপপরিচালক ছানাউল হক মন্ডল ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘বিভিন্ন সংস্থা ঘূ’র্ণিঝড় অশনি নিয়ে সাত দিন আগে পূর্বাভাস দেয়। যেটা আমরা করিনি। কারণ, আমাদের বলার দরকার নেই যে ঘূ’র্ণিঝড় বাংলাদেশে আঘাত হানবে। এটা বলাও সঠিক নয়। কারণ, সাগরে থাকলে যেকোনো সময় ঘূর্ণিঝড়ের দিক ও গতি পরিবর্তন হতে পারে।
আমরা আমাদের মডেলগুলো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে আপডেট দিয়েছি। ফলে জনগণকে সঠিক তথ্য দেওয়া সম্ভব হয়েছে।’ ‘পূর্বাভাস দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের স্ট্যান্ডিং অর্ডার আছে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কোনো ঘূ’র্ণিঝড় বাংলাদেশে আঘাত হানলে কিংবা ৪ নম্বর সতর্ক সংকেত দিলে ৪৮ ঘণ্টা আগে অবশ্যই সরকারকে তা জানাতে হবে। তারপরই সরকার
সিদ্ধান্ত নেবে আসলে কী করা দরকার। যেহেতু আমাদের স্ট্যান্ডিং অর্ডার আছে, সেহেতু সাত দিন আগে আমাদের কিছু বলার দরকার নাই। আমরা টাইম টু টাইম আমাদের অবজারভেশনগুলো যাচাই-বাছাই করে পূর্বাভাস দেই। একটা ঘূর্ণিঝড় সাগরে থাকাবস্থায় দিক পরিবর্তন করতে পারে, গতি কমতে বা বাড়তে পারে। এছাড়া আমরা যেসব মডেল ব্যবহার করে পূর্বাভাস দেই,
সেগুলো একেকবার একেকদিকে দেখায়। কোনো মডেলই বলতে পারবে না এটা ৭০ থেকে ৮০ ভাগ সঠিক।’ ছানাউল হক মন্ডল বলেন, ‘ভারত কিন্তু মডেল দেখে সাত দিন আগেই পূর্বাভাস দিয়েছিল। মডেলের প্রমাণ তো পরিষ্কার! শুধু একটি মাত্র মডেলের তথ্য দিয়ে পূর্বাভাস দিলে সেটি সঠিক হয় না। আমরা সার্বক্ষণিক ঘূ’র্ণিঝড়টা অবজারভ করেছি এবং টাইম টু টাইম আপডেট তথ্য দিয়ে
পূর্বাভাস দিয়েছি। যদি বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় আসত তাহলে আমরা ৪৮ ঘণ্টা আগে ৪ নম্বর সংকেত দিয়ে সরকারকে জানিয়ে দিতাম। ৪৮ ঘণ্টা আগে জানালেই সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিত। আমরা সরকারের স্ট্যান্ডিং অর্ডারটা ফলো করেই পূর্বাভাস দেই। জনগণ যেন বিভ্রান্ত না হয় সেদিকে আমরা নজর রাখি।’ বিভিন্ন সংস্থা ঘূ’র্ণিঝড় অশনি নিয়ে সাত দিন আগে পূর্বাভাস দেয়। যেটা আমরা করিনি। কারণ, আমাদের বলার
দরকার নাই যে ঘূ’র্ণিঝড় বাংলাদেশে আঘাত হানবে। এটা বলাও সঠিক নয়। কারণ, সাগরে থাকলে যেকোনো সময় ঘূর্ণিঝড়ের দিক ও গতি পরিবর্তন হতে পারে। আমরা আমাদের মডেলগুলো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে আপডেট দিয়েছি। ফলে জনগণকে সঠিক তথ্য দেওয়া সম্ভব হয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপপরিচালক ছানাউল হক মন্ডল অন্যান্য আবহাওয়া অফিসের চেয়ে আপনাদের পূর্বাভাস অনেকটা সঠিক, এর কারণ কী—
জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তির দিক থেকে আমাদের সক্ষমতা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। এ সেক্টরে আমাদের অভিজ্ঞতাও বেশ। আমরা যে মডেলগুলো ব্যবহার করি, সেগুলো ৭২ ঘণ্টা আগ পর্যন্ত সঠিক তথ্য দিতে পারে। মডেলগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমরা বেশ সতর্কতা অবলম্বন করি। এসব কারণে আমরা সঠিক তথ্যটা জনগণকে দিতে পেরেছি।’ এক প্রশ্নের
জবাবে তিনি বলেন, ‘আগে আমরা যখন পূর্বাভাস দিতাম, তখন মানুষ সেভাবে মূল্যায়ন করত না। এখন কিন্তু সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে সবাই মূল্যায়ন করছে। কারণ, আমাদের দেওয়া পূর্বাভাসের ৮০ থেকে ৮৫ ভাগই সঠিক। আমরা সবসময় চেষ্টা করি সঠিক তথ্য দিয়ে পূর্বাভাস দেওয়ার। দেশের মানুষও আমাদের ওপর আস্থা রাখছে। বাংলাদেশ আবহাওয়
অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক শাহ আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আবহাওয়া অধিদপ্তরের গুণগতমান দিনদিন বাড়ছে। এ সেক্টরে যদি সঠিক ও অভিজ্ঞ লোক আসে তাহলে মান আরও বাড়বে। ‘আপনি যদি ঘূ’র্ণিঝড় নিয়ে কোনো পূর্বাভাস দেন, তাহলে সেটা ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে থাকতে হবে। তা না হলে পূর্বাভাস ভুল হবে। যেহেতু ঘূর্ণিঝড় সাগর থেকে আসে সেহেতু অনেকগুলো প্যারামিটারে এটাকে বিচার-বিশ্লেষণ করতে হয়। ঘূ’র্ণিঝড়
অশনি নিয়ে বিবিসি আমার বিবিসি আমার কাছে জানতে চেয়েছিল। আমি বলেছিলাম, অশনি সাগরেই দুর্বল হয়ে পড়বে। প্যারামিটারগুলো সঠিকভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করতে পারলে আনুমানিক হিসাবে সাগরে সৃষ্ট ঘূ’র্ণিঝড়ের পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব। পরিসংখ্যানগত তথ্য থেকে পূর্বাভাস দেওয়া উচিত নয়। যেটা অনেকে করেছেন।’
ঘূ’র্ণিঝড় অশনি নিয়ে বিবিসি আমার কাছে জানতে চেয়েছিল। আমি বলেছিলাম, অশনি সাগরেই দুর্বল হয়ে পড়বে। প্যারামিটারগুলো সঠিকভাবে বিচার-বিশ্লেষণ করতে পারলে আনুমানিক হিসাবে সাগরে সৃষ্ট ঘূ’র্ণিঝড়ের পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব। পরিসংখ্যানগত তথ্য থেকে পূর্বাভাস দেওয়া উচিত নয়। যেটা অনেকে করেছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক শাহ আলম ‘পরিসংখ্যান ছাড়াও অনেক কিছু থাকে, যেটা আবহাওয়াবিদ ছাড়া অন্য কারও জানা সম্ভব নয়। এ কারণেই জটিল এ গুরুদায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আবহাওয়াবিদদের।’
‘বেশি আগে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া ঠিক নয়’— উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর হলো আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার একমাত্র প্রতিষ্ঠান। সরকারের স্ট্যান্ডিং অর্ডার মেনে কাজ করছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। বাংলাদেশের আবহাওয়ার পূর্বাভাস যদি পাশের দেশ বা আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থা সঠিকভাবে দিতে পারত তাহলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের কোনো দরকার ছিল না। ওই সব সংস্থার তথ্য দিয়েই চলানো যেত।’
দেশের জনগণের উচিত আমাদের পূর্বাভাসের ওপর আস্থা রাখা। একই সঙ্গে প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষদের সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া। তাহলে যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমরা সহজেই মোকাবিলা করতে পারব— বলেন অভিজ্ঞ এ আবহাওয়াবিদ।