প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের শিক্ষা সনদ যাচাইয়েরর উদ্যোগ নিয়েছে মন্ত্রণালয়। খুব শিগগিরই এ বিষয়ে কাজ শুরুর ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। প্রাথমিক পর্যায়ে সনদ যাচাইয়ে কারিগরি
সহায়তা দেবে মোবাইল কোম্পানী টেলিটক। পর্যায়ক্রমে দেশের ৬৫ হাজারেরও বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় চার লাখ শিক্ষকের একাডেমিক সনদ যাচাইয়ে উদ্যোগী হয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের জাল সনদ নিয়ে দেশজুড়ে বেশ আলোড়ন শুরু হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবার সনদ যাচাই করা হবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরতদের।
মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আমিনুল ইসলাম খান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে অনলাইনে টেলিটকের মাধ্যমে শিক্ষকদের সনদ যাচাই করা হবে।
সচিব আরও বলেন, জাল সনদধারী ও মানহীন শিক্ষকদের বিষয়ে অভিযোগ আমরাও পেয়েছি। তাই শিক্ষকদের তথ্য যাচাই করা হবে। আশা করি, জাল সনদধারীদের চিহ্নিত করা যাবে। প্রাথমিকভাবে অনলাইনে
শিক্ষকদের সনদ যাচাই করা হবে। সনদ যাচাইয়ের জন্য শিক্ষক প্রতি ৫ টাকা ফি নেবে টেলিটক। দেশের বিভিন্ন স্কুলে কর্মরত প্রকৃত শিক্ষক, এমনকি শিক্ষক সংগঠনগুলোও চাইছে, প্রাথমিকে জাল সনদ নিয়ে কর্মরতদের অতি দ্রুত চিহ্নিত করা হোক।
এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন পর্যায় থেকে জাল সনদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষক নিবন্ধন, স্নাতক, কম্পিউটার সনদ ইত্যাদি জাল
করার প্রবণতা থাকলেও প্রাইমারি স্কুলগুলোতে মূলত জাল করা হয়েছে একাডেমিক সনদ। যার সিংহভাগই ঘটেছে দেশের কমিউনিটি স্কুল ও রেজিস্টার্ড স্কুলগুলো স্থাপন, এমপিওভুক্তি ও সরকারিকরণের সময়ে।
সে সময়ে ২৬ হাজারের বেশি স্কুলকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। খবর পেয়ে রাতরাতি নিয়োগ দেয়া হয় প্রতিষ্ঠাতাদের আত্মীয়-স্বজনকে। এভাবে
নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের অনেকেরই প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিলো না। তাই সরকারিকরণের পর তাদের প্রয়োজনীয় ডিগ্রি অর্জন করে নেওয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছিলো।
জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের মতে, সরকারিকরণের সুযোগ নিয়ে অনেকেই উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ডিগ্রি অর্জন করলেও অনেকেই ডিগ্রি, অনার্স, উচ্চ মাধ্যমিক
ইত্যাদি সনদ জাল করে জমা দেন। সরকারিকৃত অনেক শিক্ষক তাদের নিজের নামই ঠিকমতো লিখতে পারেন না। ছাত্র পড়ানোর সক্ষমতা না থাকায় এসব শিক্ষকের ছাত্ররাও প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো শিখতে ব্যর্থ হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, যথাযথ অনুসন্ধান হলে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের চেয়ে প্রাথমিকে অনেক বেশি জাল শিক্ষকের সন্ধান পাওয়া যাবে। এরইমধ্যে স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জাল শিক্ষকদের নেয়া বেতন
ভাতার টাকা ফেরত দেয়ার সুপারিশ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ)। শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সুশীল জনদের দাবি, প্রাথমিকেও এভাবে জাল শিক্ষকদের তালিকা করে অবৈধভাবে নেওয়া বেতন-ভাতার টাকা ফেরত নেওয়া হোক। একই সঙ্গে জালিয়াতির দায়ে তাদের বিচার করে শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।