বিজয়ের বাংলা: যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের ঝিকরগাছায় ৭২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে কপোতাক্ষ নদের ওপর নির্মাণাধীন সেতু নিয়ে বড় ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, বর্ষা মৌসুমে ব্রিজের নিচ দিয়ে লঞ্চ বা বড় নৌকা যেতে পারবে না। অন্যদিকে, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) দাবি, অভ্যন্তরীণ জলপথ ও তীরভূমিতে স্থাপনা নির্মাণ নীতিমালা অনুসরণ না করেই সেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছে। অভিযোগ আছে, সেতু নির্মাণে বিআইডব্লিউটিএ’র ছাড়পত্রও নেওয়া হয়নি।
ঝিকরগাছা বাজারের গা ঘেঁষে এই সেতুটির অবস্থান। দেশের অন্যতম প্রধান স্থলবন্দর বেনাপোলের সঙ্গে এই সেতু সংযোগ করে দিয়েছে দেশের অন্য জেলাগুলোকে।
সূত্র জানায়, জাপানের সাহায্য সংস্থা জাইকার অর্থায়নে সেতু নির্মাণের কাজ চলছে। এজন্য সেতু ও সংযোগ সড়ক নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৭২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এছাড়া, নদের দুই পাড়ে ৯২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ব্যয়ে দুই দশমিক ৪ একর জমি ইতোমধ্যে অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ঢাকাভিত্তিক যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মনিকো-ডিএনকো সেতু ও সংযোগ সড়ক নির্মাণ করছে। ২০১৯ সালের ১ জুলাই কাজ শুরু হয়েছে এবং ২০২২ সালের ৩১ মে কাজ শেষ হবে।
সূত্র আরও জানায়, পুরোনো সেতুর দৈর্ঘ্য ছিল ১১৫ মিটার, প্রস্থ ৬ দশমিক ২১ মিটার এবং উচ্চতা ৬ দশমিক ১০ মিটার। নতুন সেতুর দৈর্ঘ্য ১২০ মিটার, প্রস্থ ১১ দশমিক ০৫ মিটার এবং উচ্চতা ৬ দশমিক ৩৪ মিটার। অর্থাৎ পুরোনো সেতুর চেয়ে নতুন সেতুর উচ্চতা শূন্য দশমিক ৩৩ মিটার (প্রায় ১০ ইঞ্চি) বেশি।
কপোতাক্ষ পাড়ের বাসিন্দা ঝিকরগাছা মহিলা কলেজের উপাধ্যক্ষ মো. ইলিয়াস উদ্দীন বলেন, ‘যশোরবাসীর প্রাণের দাবি ছিল পুরোনো ব্রিজ ভেঙে নতুন ব্রিজ তৈরি করার। তবে নির্মাণকাজে নিয়মনীতি মানা হচ্ছে না। আমরা শুনেছি, ১৮ বছরের পানির গড় উচ্চতার পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিজের গার্ডারের উচ্চতা নির্ধারণ করা হয়। সেইক্ষেত্রে কপোতাক্ষে ব্রিজ নির্মাণে পানি থেকে সেতুর গার্ডারের উচ্চতা প্রায় ২৫ ফুট হওয়ার কথা। কিন্তু নতুন ব্রিজে এই উচ্চতা মাত্র ১৫ ফুট তিন ইঞ্চি। এতে করে বড় নৌ যান চলাচল মোটেও সম্ভব নয়।’
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, নদের ওপর নির্মিত পুরোনা সেতুটি ভেঙে সেখানে নতুন সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। নতুন সেতুর দুটি অংশ। একটি অংশ নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। সেতুর অপর অংশ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।
এদিকে নতুন সেতুতে ত্রুটি রয়েছে বলে দাবি করেছে বিআইডব্লিউটিএ। সংস্থাটি বলছে, অভ্যন্তরীণ জলপথ ও তীরভূমিতে স্থাপনাদি নির্মাণ নীতিমালা অনুসরণ না করে সেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে পানি বৃদ্ধি পেলে সেতুর নিচ দিয়ে নৌ যান চলাচল করতে পারবে না। এ অবস্থায় সেতুর দ্বিতীয় অংশ নির্মাণের ক্ষেত্রে বুঝে-শুনে ছাড়পত্র (উলম্ব ও আনুভূমিক) দিতে বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের (বাংলাদেশ) প্রকল্প পরিচালককে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
অভ্যন্তরীণ জলপথ ও তীরভূমিতে স্থাপনাদি নির্মাণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা-২০১০ অনুযায়ী দেশে চার শ্রেণির জলপথ রয়েছে। প্রথম শ্রেণির জলপথে সারাবছর সর্বনিম্ন ৩ দশমিক ৬ থেকে ৩ দশমিক ৯ মিটার, দ্বিতীয় শ্রেণির জলপথে সারাবছর সর্বনিম্ন ২ দশমিক ১ থেকে ২ দশমিক ৪ মিটার, তৃতীয় শ্রেণির জলপথে সারাবছর সর্বনিম্ন ১ দশমিক ৫ থেকে ১ দশমিক ৮ মিটার এবং চতুর্থ শ্রেণির জলপথে শুষ্ক মৌসুমে ১ দশমিক ৫ মিটারেরও কম পানির গভীরতা বিদ্যমান থাকে।
বিধিমালায় বলা হয়েছে, কোনও নির্মাণ প্রতিষ্ঠানকে অভ্যন্তরীণ জলপথ ও তার তীরভূমির ওপর স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে উলম্ব ও আনুভূমিক ছাড়পত্র গ্রহণ করতে হবে। নিরাপদ এবং সুষ্ঠুভাবে নৌ যান চলাচল নিশ্চিতে প্রথম শ্রেণির জলপথের ক্ষেত্রে উলম্ব ছাড়ের পরিমাপ হবে ন্যূনতম ১৮ দশমিক ৩ মিটার এবং আনুভূমিক ছাড়ের পরিমাপ হবে ন্যুনতম ৭৬ দশমিক ২২ মিটার। দ্বিতীয় শ্রেণির জলপথের ক্ষেত্রে উলম্ব ছাড়ের পরিমাপ হবে ন্যূনতম ১২ দশমিক ২ মিটার এবং আনুভূমিক ছাড়ের পরিমাপ হবে ন্যূনতম ৭৬ দশমিক ২২ মিটার। তৃতীয় শ্রেণির জলপথের ক্ষেত্রে উলম্ব ছাড়ের পরিমাপ হবে ন্যূনতম ৭ দশমিক ৬২ মিটার এবং আনুভূমিক ছাড়ের পরিমাপ হবে ন্যুনতম ৩০ দশমিক ৪৮ মিটার। চতুর্থ শ্রেণির জলপথের ক্ষেত্রে উলম্ব ছাড়ের পরিমাপ হবে ন্যূনতম ৫ মিটার এবং আনুভূমিক ছাড়ের পরিমাপ হবে ন্যূনতম ২০ মিটার।