বাবা আর নেই, আমরা কি করবো? বাবা মারা গেছে। ও দাদু, আমরা কি করবো? আমাদের আর কেউ ভালোবাসবে না।আব্বুর মতো কেউ তো আর ভালবাসবে না।শনিবার (৪ ডিসেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে এভাবে বিলাপ করছিলেন
নিহত ট্রাফিক পুলিশ কনস্টেবল মনিরুল ইসলাম মেঝ মেয়ে বিবি ফাতেমা।নগরের জাকির হোসেন সড়কের ঝাউতলা রেলগেটের একপাশে লোহার গেট খোলা থাকায় রেললাইনে উঠে যায় বাস, সিএনজি অটোরিকশা ও টেম্পো। এসময় নাজিরহাট থেকে চট্টগ্রাম স্টেশনগামী ডেমু
ট্রেনের সঙ্গে গাড়িগুলোর সংঘর্ষ হয়। এসব গাড়িকে থামাতে গিয়ে দুর্ঘটনায় নিহত হন চট্টগ্রাম মেট্রাপলিটন পুলিশ (সিএমপি) ট্রাফিক উত্তর বিভাগের কনস্টেবল মনিরুল ইসলাম (৪৫)। তিনি নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার খোয়াজপুর গ্রামের কে বি এম ফয়েজ হোসেনের ছেলে।
তিনি নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার চন্দননগর এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন।বড় মেয়ে মাহমুদা ফেরদৌস লিমা বাংলানিউজকে বলেন, বাবা মারা গেছে, কে আমাদের দায়িত্ব নিবে। আমার বাবার কি দোষ ছিল? বাবা আমাদের শাসন করতেন আবার খুব আদরও করতেন।
বাবা ছাড়া আমরা অসহায়। আল্লাহ, আমার আব্বুর সব পাপ মাফ করে দিন, তাকে জান্নাত দিন।মনির হোসেনের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ মর্গে নিয়ে যাওয়ার সময় মনির হোসেনের স্ত্রী সেলিনা আক্তার জরুরি বিভাগের পুলিশ বক্সে বসে কান্নাকাটি
করছিলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, আমাদের কি হবে? সন্তানদের নিয়ে কি করবো? তাদের দায়িত্ব কে নিবে?ঝাউতলা রেল ক্রসিং এলাকায় মনির হোসেনের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছিলেন ট্রাফিক পুলিশ কনস্টেবল আলী। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, মনির ভাই ভালো মানুষ
ছিলেন। আমি পশ্চিম পাশে ডিউটি করছিলাম আর মনির ভাই ছিলেন পূর্বপাশে। ডেমু ট্রেন আসার সময় রেললাইনের ওপর বাস, অটোরিকশা ও টেম্পো উঠে গেলে তিনি সরাতে ছুটে যান। এসময় ঘটে দুর্ঘটনা। ট্রেন যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সার্জেন্ট স্যারের সহায়তায় মনির ভাইকে অ্যাম্বুলেন্সে করে মেডিক্যাল নিয়ে আসি।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) বাংলানিউজকে বলেন, ঘটনার সময় ঝাউতলা
রেল ক্রসিং এলাকায় এক ট্রাফিক সার্জেন্ট ও চার জন ট্রাফিক কনস্টেবল কর্মরত ছিলেন।সিএমপি সূত্রে জানা যায়, পুলিশ কনস্টেবল মনিরুল ইসলাম ১৯৭৭ সালে ১৫ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯৬ সালের ৮ জুন তিনি পুলিশে যোগদান করেন। সিএমপিতে যোগদান করেন ২০১৩ সালের ১৭ জুন। ট্রাফিক উত্তরে যোগদান করেন ২০১৯ সালের ৮ জুন। পুলিশের চাকরি জীবনে মনিরুল ইসলাম কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ ৪৯ টি পুরস্কার পান ও চাকরী জীবনে কোন শাস্তি পাননি।