ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌর শহরের শান্তিনগরের বাসিন্দা ৭৮ বছরের জোহরা খাতুনকে কুপিয়ে খুন করেন তারই ছোট ছেলে জামির খাঁ। জমি নিয়ে ৩৬ বছর ধরে চলা বিরোধে প্রতিপক্ষকে ফাঁসিয়ে নিজেরা
সুবিধা নিতে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়।পুলিশের হাতে আটকের পর হত্যার কথা স্বীকার করেছেন জামির। জামিরের ঘর থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দা উদ্ধারের পর সন্দেহ হলে তাকে আটক করে পুলিশ। পরিবারের
লোকজনের সামনে মুখোমুখি করার পর জামির জানান, বিরোধে অতিষ্ঠ হয়ে রাগের মাথায় তিনি এ কাণ্ড ঘটিয়েছেন।রোববার দুপুরে বৃদ্ধা জোহরা খাতুনকে নিজ বাড়িতে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তিনি শান্তিনগর
এলাকার রশিদ খাঁর স্ত্রী। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায় পুলিশ। এ ঘটনায় থানায় মামলা করেন জামিরের বড় ভাই জাহাঙ্গীর।জমি নিয়ে বিরোধে প্রতিবেশী আত্মীয়রা এ
হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করেছিলেন পরিবারের লোকজন। এরপর তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিপক্ষের তিনজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরে রাতে জামিরকে আটক করা
হয়প্রতিবেশীরা জানান, রশিদ খাঁর সঙ্গে প্রতিবেশী আত্মীয় বজলু খাঁর পরিবারের জমি নিয়ে বিরোধ ছিল। আদালতের রায়ে জমিটি দখলে নেয় রশিদ খাঁর পক্ষ। গতকাল রোববার দুপুরে ওই জমির সীমানা প্রাচীর
ভেঙে দেওয়ায় রশিদ খাঁর পরিবারের ওপর হামলা চালানো হয়।বৃদ্ধার ছেলে জাহাঙ্গীর খাঁ তাৎক্ষণিকভাবে জানান, জমি নিয়ে বিরোধে ফজল খাঁ, ইয়াছিন খাঁসহ আরো কয়েকজন হামলা চালান। বাড়িতে ঢুকে তার
মাকে হত্যা করেন তারা।শান্তিনগরের বাসিন্দা মো. মোসলেম উদ্দিন জানান, পারিবারিক বিরোধে মারামারির খবর পেয়ে সেখানে তিনি ছুটে যান। হামলায় এক বৃদ্ধা মারা গেছেন বলে জানতে পেরেছেন।ঘটনাস্থলে থাকা
ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. শিপন হায়দার বলেন, জমি নিয়ে বিরোধে চাচাতো নাতিসহ অন্যরা এ হামলা চালান বলে পরিবারের লোকজন অভিযোগ করেছেন। এরপর তিনজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
পরে রাতে আরেক পক্ষের দুজনকে আটক করা হয় বলে জানতে পেরেছি।বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানায়, হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনে মাঠে নামে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দা নিহতের বাড়িতে পাওয়া গেলে
সন্দেহ পুলিশের পাকাপোক্ত হয়। জামিরকে আটকের পরই ঘটনার মোড় ভিন্ন দিকে ঘুরে যায়। একপর্যায়ে পুলিশ কখনো কঠোর হয়ে কখনো কৌশলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে। তাকে পরিবারের লোকজনের
সামনে এনে বিভিন্ন বিষয় জানতে চাইলে একপর্যায়ে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেন তিনিপুলিশকে জামির জানান, জমি নিয়ে বিরোধে ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে ওঠেন তারা। আদালতের রায় পেলেও তারা ভোগদখল করতে
পারছিলেন না। রোববার প্রতিপক্ষ বাড়ির দেয়াল ভাঙলে তাদের ফাঁসানোর জন্য হুট করে রাগের মাথায় মাকে হত্যা করেন।আখাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মিজানুর রহমান জানান, সন্দেহ হলে
জামিরকে থানায় আনা হয়। পরবর্তীতে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেন। ১৬৪ ধারায় জবানবন্দির জন্য জামিরকে সোমবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতে পাঠানো হয়েছে।