ভবদহ পাড়ের চারিদিকে অথৈ পানি, লাশ দাফন হচ্ছে অন্যত্র, বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে মানুষের জীবন-যাপন। খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট চরমে। গবাদিপশু নিয়ে সমস্যার মধ্যে দিন কাটছে তাদের। গত মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) মণিরামপুর উপজেলার আম্রঝুটা গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক গাজীর স্ত্রী রোকেয়া বেগমের (৬২) মৃত্যু হয়।
এলাকায় পানিতে তলিয়ে থাকায় নিজ পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করতে পারেননি স্বজনরা। তাকে অন্যত্র দাফন করতে হয়েছে। অভিশপ্ত ভবদহে স্থায়ী সমস্যার কারণে প্রায় চার দশক ধরে জলাবদ্ধতার শিকার যশোরের মণিরামপুর- কেশবপুর, খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা থানার ৮০টি গ্রামের বাসিন্দারা।
এ চারটি উপজেলার ৮০টি গ্রামের বেশিরভাগ পরিবার পানিবন্দি হয়ে জীবন-যাপন করছেন। ভবদহ এলাকা সংলগ্ন প্রায় সবকটি বিল ছাপিয়ে পানিতে বসতবাড়ি স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। জলাবদ্ধ এলাকার অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান কার্যক্রম নেই। এমনকি এলাকার রাস্তা ঘাটও পানিতে বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে। এসব অঞ্চলে কোন কোন পরিবার বাড়িতে পানিবন্দি অবস্থায় থাকলেও খোঁজ খবর নিচ্ছেন না কেউ।
ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির মশিয়াহাটি আঞ্চলিক কমিটির আহবায়ক শিক্ষক উৎপল বিশ্বাস বিডি২৪লাইভকে বলেন, হঠাৎ করে আকাশ বৃষ্টি হওয়ায় এলাকায় পানি আরো বেড়ে গেছে। মানুষ খাদ্য চিকিৎসা এবং বিশুদ্ধ পানির সংকটে রয়েছেন। এসব ব্যাপারে সরকারি-
বেসরকারি কোন উদ্যোক্তাই পানিবন্দি মানুষগুলোর খোঁজ খবর নিচ্ছেন না। অনেকেই বাড়ি-ঘর ছেড়ে রাস্তা অথবা উঁচু কোন স্থানে টোং ঘর বেঁধে কোন রকম মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। মানুষ মারা গেলে দাফন করার জায়গা মিলছে না। অনেক মৃত্যু ব্যক্তির দাফন করতে দূরের কোথাও নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির সদস্য সচিব চৈতন্য পাল বলেন, ভবদহের সমস্যার কারণে মানুষ যে অবস্থায় ছিলো, হঠাৎ ক’দিনের বৃষ্টিতে জল বেড়ে যাওয়ায় বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে মানুষের জীবনযাত্রা। এই মুহুর্তে আমডাঙ্গা খাল স্রোত ধারা সৃষ্টির জন্য যা করণীয় তাই করার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সংগঠনটি। মঙ্গলবার ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটি মশিয়াহাটি হাই স্কুলের এক মিটিং করা হয়।
পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক রণজিত বাওয়ালী বিডি২৪লাইভকে বলেন, এই মুহুর্তে ভবদহ অঞ্চলের মানুষ বাঁচাতে ভবদহের ২১ ভেল্টের কপাট খুলে দেওয়ার বিকল্প কিছুই ভাবছি না। এছাড়া আমডাঙ্গা খাল জল ধারা তৈরি করতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। ওই অঞ্চলের স্থায়ী জলাবদ্ধতার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দায়ী করে তিনি আরো বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ভবদহের সমস্যাকে জিইয়ে রেখে ব্যবসা বাণিজ্য করে চলেছেন। এর সাথে এলাকার কিছু নামধারী নেতা ও জনপ্রতিনিধি জড়িত রয়েছে। যে কারণে ভবদহের সমস্যার স্থায়ী সমাধান আদৌ হবে কিনা তা নিয়ে শংকায় রয়েছে ভূক্তভোগী জনসাধারণ।
এ সংগঠনের নেতারা এলাকার সমস্যার সমাধানের জন্য দ্রুত টিআরএম চালু, আমডাঙ্গা খাল খনন এবং শ্রী-হরি নদীর স্লুইচ গেটের দক্ষিণ অংশের পলি অপসারণের দাবী জানিয়েছেন। যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহিদুল ইসলাম বিডি২৪লাইভকে বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড এ মুহুর্তে ২১ ভেল্টের মধ্য থেকে কয়েকটি ভেল্টের কপাট খুলে দেওয়া হয়েছে।