নাজমুল হাসান পাপনের প্রশ্নটা অমৌলিক নয় মোটেও, ‘ব্যাটসম্যানদের পরীক্ষা নিতে একটু শাফল করলাম। সিনিয়রদের বিশ্রাম দিয়ে নতুন মুখ আনলাম। কিন্তু বোলাররা তো আগের সবাই আছে। তাহলে কেন জিম্বাবুয়ে এতো রান করলো?’
হারারেতে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে জিম্বাবুয়ে দুইশর বেশি রান করায় বেজায় চটেছিলেন বিসিবি সভাপতি। একদিনের ব্যবধানে সেই বোলাররা তাকে শান্ত করেন জিম্বাবুয়েকে ১৩৫ রানে আটকে রেখে। বাংলাদেশ পরবর্তীতে ম্যাচ জিতে যায় ৭ উইকেট হাতে
রেখে। তিন ম্যাচ সিরিজে এখন ১-১ সমতা। একই মাঠ, একই উইকেট। ২৪ ঘণ্টার আগে-পরে বোলারদের শক্তভাবে ফিরে আসার ঘটনা বিশ্ব ক্রিকেটে অহরহ। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এবার একটু ভিন্ন কিছু হয়েছে কারণ নায়ক
একেবারেই অচেনা। মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। অফস্পিন পারেন। স্বীকৃত ক্রিকেটে তার ৫ উইকেটও আছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ডানহাতি অফস্পিনার ৫ উইকেট পাবেন তা
জিম্বাবুয়ের জন্য সিলেবাসের বাইরের প্রশ্ন! জিম্বাবুয়ের ম্যাচটা হাতছাড়া হয়ে যায় মোসাদ্দেকের শুরুর স্পেলেই। টানা ৪ ওভার বোলিং করে মোসাদ্দেক ২০ রানে নেন ৫ উইকেট। প্রথম ওভারে চাকাভা ও মাধভেরেকে ফেরানোর
পর পরপর তিন ওভারে তার শিকার ক্রেইগ আরভিন, শন উইলিয়ামস ও মিল্টন সুম্বা। হয়ে গেল ৫ উইকেট। ইলিয়াস সানী, মোস্তাফিজুর রহমান ও সাকিব আল হাসানের পর চতুর্থ বোলার হিসেবে টি-টোয়েন্টি
এক ইনিংসে ৫ উইকেট পেলেন এ স্পিনার। মোসাদ্দেকের শুরুর ওই ধাক্কার পর দেয়াল হয়ে দাঁড়ান সিকান্দার রাজা ও রায়ান বার্ল। তাদের ৬৫ বলে ৮০ রানের জুটিতে জিম্বাবুয়ে লড়াই করলেও বলার মতো পুঁজি পায়নি। রাজা
দারুণ ব্যাটিংয়ে ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৬২ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেলেন। বার্ল একপ্রান্ত আগলে ৩১ বলে করেন ৩২ রান। তাদের ফেরার পর দলের রান আর বাড়েনি। স্পিনে জিম্বাবুয়েকে
ঘায়েল করলেও পেস বোলিং আজও আপ টু দ্য মার্ক হয়নি। বিশেষ করে মোস্তাফিজুর রহমান ও শরিফুল ইসলাম। শরিফুল ৪ ওভারে ৩৭ রান দিয়ে ছিলেন উইকেটশূন্য। মোস্তাফিজ রাজাকে থামালেও রান দিয়েছেন ৩০। দলে ফেরা
হাসান মাহমুদ ২৬ রানে পেয়েছেন ১ উইকেট। সহজ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে লিটন তার চেনা ছন্দেই বোলারদের শাসন করতে থাকেন। পেসার তানাকা চিভাঙ্গাকে এক ওভারে এক চার ও দুই ছক্কায় উড়িয়ে এলোমেলো করেন। অফস্টাম্পের
বাইরের কাটশট গুলো লাগছিল বেশ। টাইমিং ও প্লেসমেন্টে অসাধারণ এ ব্যাটসম্যান ফুরফুরে মেজাজে ব্যাটিং করে ৩৩ বলে তুলে নেন ৫৬ রান। যেখানে চার মারেন ৬টি, ছক্কা ২টি। কিন্তু
বাংলাদেশের দুশ্চিন্তার বড় নাম ওপেনিং জুটি। লিটনের সঙ্গে ওপেনিংয়ে নামা মুনিম দুই ম্যাচেই ফ্লপ। আজ ৮ বলে ৭ রান করে উইকেট বিলিয়ে আসেন। এনামুল নিজের
ছায়া হয়ে আছেন। ১৫ বলে ১৬ রান করে সিরিজে দ্বিতীয়বারের মতো রাজার শিকার তিনি। ৮১ রানে ৩ উইকেট হারানো বাংলাদেশকে সেখানে থেকে আর বিপদে পড়তে দেননি আফিফ ও শান্ত। তাদের অবিচ্ছিন্ন ৫৫ রানের
জুটি বাংলাদেশকে এনে দেয় কাঙ্খিত জয়। জয়ের হাসিতে সিরিজে সমতা ফেরালেও পেস বোলিং ও ওপেনিং জুটি বাংলাদেশের দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে যাচ্ছে। এই ফরম্যাটে লিটন বাদে কোনো ওপেনার থিতু হতে পারেননি এখনও। তিন নম্বর
পজিশনেও একই অবস্থা। অবশ্য সাকিব ফিরলেও কিছুটা উন্নতি হতেও পারে। কিন্তু তাদের বিশ্রামে যারা সুযোগ পাচ্ছে তারা ভালো না করায় ভবিষ্যতের জন্য এমন পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। পরপর
দুইদিন দুই টি-টোয়েন্টিতে দুইরকম স্বাদ পেলেন অধিনায়ক কাজী নুরুল হাসান সোহান। প্রথম ম্যাচ হারের পর শক্তভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যাশা করেছিলেন। মোসাদ্দেকের
দ্যুতি ছড়ানো বোলিংয়ের পর লিটনের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে দলকে সমতায় ফিরেছে। মঙ্গলবার এই মাঠেই হবে শিরোপা নিষ্পত্তি। ম্যাচটা বাংলাদেশের জন্য বিরাট গুরুত্বপূর্ণ বলার অপেক্ষা রাখে না।