এবারের প্রথম দফা বন্যার রেশ কাটতে না কাটতেই আবারো দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যার দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। সিলেট, সুনামগঞ্জ, রংপুর, নীলফামারী,কুড়িগ্রাম ও জামালপুর জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এসব এলাকার শত শত গ্রাম প্লাবিত হওয়ায়
প্রায় ৫০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এদিকে ভারতের গজলডোবা বাঁধের গেট খুলে দেয়ায় তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার পানিতে ডুবে জামালপুরে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বন্যা আক্রান্ত এলাকায় ফসলের ক্ষেত ও বীজতলা প্লাবিত হয়েছে। ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে এসব জেলার আশপাশের নদনদীর পানি হু হু করে বাড়ছে।
রংপুর অফিস জানায়, ভারতের গজলডোবার গেট খুলে দেয়ায় উজানের ঢল এবং বর্ষণে তিস্তার পানি ডালিয়া ব্যারাজ পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তার বাড়ন্ত পানি ঢুকেছে অববাহিকার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলে বাসাবাড়িতে। তলিয়ে গেছে বাদামসহ উঠতি ফসল। দুর্গত মানুষের পাশে এখনো পৌঁছেনি কোনো সহায়তা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তাদের অসহায়ত্বের কথা জানিয়েছেন।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবীব জানিয়েছেন, ডালিয়া ব্যাজার পয়েন্টে তিস্তায় গত বুধবার রাত ৯টা থেকে তৃতীয় দফায় পানি বেড়ে গতকাল দুপুরে তা বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। এই পানি বিকেলে কিছুটা কমে রাতে আবারো বিপদসীমার অনেক ওপরে থাকবে। পাউবোর
এই কর্মকর্তা আরো জানান, এই পূর্বাভাষ আমরা দুই এক সপ্তাহ থেকে সংশ্লিষ্টদের জানাচ্ছি। যাতে নদী অববাহিকার লোকজন নিরাপদে অবস্থান নিতে পারেন। এদিকে রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজার রহমান জানান, গতকাল বেলা ৩টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় রংপুর অঞ্চলে ৩৫ দশমিক ৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকবে।
সরেজমিন বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে এবং নদীপাড়ের মানুষের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য মতে, তিস্তায় পানি বৃদ্ধি শুরু হওয়ায় নিলফামারীর ডিমলার ছাতনাই এলাকা থেকে জলঢাকা, লালমনিরহাটের পাটগ্রাম হাতীবান্ধা, কালিগঞ্জ, আদিতমারি, সদর, রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, পীরগাছা, কুড়িগ্রামের রাজারহাট, উলিপুর, চিলমারি, এবং গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের হরিপুরের ব্রহ্মপুত্র নদ
পর্যন্ত অববাহিকার ৩৫২ কিলোমিটার এলাকার চরাঞ্চল এবং নিম্নাঞ্চলে পানি উঠেছে। কোথাও কোথাও কোন কোন বাড়িতে কোমর অবধি পানি ঢুকেছে। অনেক স্থানে রাস্তাঘাট ভেঙে যাচ্ছে পানির তোড়ে ভেঙে গেছে। দুর্গত এলাকায় মানুষ খুবই বিপাকে পড়েছেন। স্থানীয় চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী জানান, সকাল থেকে তিস্তার পানি বিপদসীমার ওপরে যাওয়ায় আমরা মাইকিং করছি। আমার ইউনিয়নের পাঁচটি ওয়ার্ডের ইতোমধ্যেই
এক হাজার বাড়িঘর তলিয়ে গেছে। এদিকে দেখা গেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড বাংলা ছাড়া আর মহিপুরসহ বিভিন্ন স্থানে আপদকালীন বালুভর্তি জিও ব্যাগ রেখে দিয়েছেন। সম্ভাব্য ভাঙন ঠেকাতে এসব জিও ব্যাগ আগাম মজুদ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পাউবো।
সিলেট ব্যুরো জানায়, সিলেট মহানগরীর অন্তত অর্ধশতাধিক এলাকার বাসাবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় এসব এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এতে দ্বিতীয়বারের ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরীর লাখো পানিবন্দী মানুষ। সময় যত গড়াচ্ছে ততই বাড়ছে বানভাসি মানুষের সংখ্যা। এ অবস্থায় মহানগরীতে প্রাথমিক পর্যায়ে ৩১টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার অন্তত সাত-আটটি উপজেলা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। তলিয়ে যাওয়া এলাকার সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। সুনামগঞ্জে গত মঙ্গলবার থেকে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে। ছাতক, দোয়ারাবাজার, তাহিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় এখন পানি বাড়ছে। অপরদিকে
সিলেটে বুধবার থেকে খারাপের দিকে যায় বন্যা পরিস্থিতি। জেলার কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, সদর ও বিশ্বনাথ উপজেলায় পানি ক্রমেই বাড়ছে। অব্যাহত পানিবৃদ্ধির কারণে ইতোমধ্যে লাখো মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বন্যাকবলিত এলাকাগুলোর সাথে উপজেলা সদর কিংবা জেলা সদরের যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। সুপেয় পানির সঙ্কটও দেখা দিচ্ছে।
এদিকে, সুরমা নদীতে পানি বাড়তে থাকায় তীর উপচে নগরীতে ঢুকে পড়েছে পানি। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, জেলার প্রধান দুই নদী সুরমা ও কুশিয়ারার বিভিন্ন পয়েন্টে পানি বেড়েছে। সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ৯৮ সেন্টিমিটার ও সিলেট পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ২৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।