বিজয়ের বাংলা: হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আরটি-পিসিআর ল্যাব চালু না হওয়ায় প্রবাসী কর্মীদের দুর্ভোগ কাটছে না। শনিবার ল্যাবটি চালু করার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। শত শত প্রবাসী কর্মী বিমানবন্দরে হাজির হলেও তারা করোনাভাইরাস পরীক্ষা করাতে পারেননি। ফলে সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ (ইউএই) বিভিন্ন দেশের প্রবাসী কর্মীরা কর্মস্থলে ফেরা হয়ে উঠছে না। করোনা পরীক্ষা করাতে না পেরে তারা হতাশা প্রকাশ করেন।
এদিকে, প্রবাসী কর্মীদের দ্রুততম সময়ে করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য আরটি-পিসিআর ল্যাব স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। শিগগিরই চালু হওয়ার আশা প্রকাশ করছে কর্তৃপক্ষ। এর আগে বৃহস্পতি ও শুক্রবার বিমানবন্দরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আরটি-পিসিআর ল্যাব স্থাপন কার্যক্রমের অগ্রগতি পরিদর্শন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমেদ। পরিদর্শনকালে তারা শনিবার থেকে ল্যাব চালুর ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
কিন্তু স্বাস্থ্য বিভাগের কারিগরি কমিটির ইতিবাচক সাড়া না পাওয়ায় এখনো ল্যাব চালু হয়নি। বিদেশযাত্রার ৬ ঘণ্টা আগে ল্যাবগুলো নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার কাজ শুরু করতে পারেনি। দায়িত্বশীল সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ল্যাবরেটরির (ল্যাব) অবকাঠামো ও যন্ত্রপাতি স্থাপিত হলেও এগুলো সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা তা দেখার জন্য কারিগরি কমিটির বিশেষজ্ঞ সদস্যরা শনিবার বৈঠকে বসেন। ল্যাব চালু করতে আরও দু-একদিন লাগতে পারে।
করোনা পরীক্ষাসংক্রান্ত জটিলতা (যাত্রার ৬ ঘণ্টা আগে বাধ্যতামূলক করোনা পরীক্ষা) দূর করতে আরটি-পিসিআর বসাতে সম্প্রতি সাতটি প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেয় সরকার। এগুলোর মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠান বাদ পড়েছে। বাকি ছয়টি প্রতিষ্ঠান ল্যাব বসানোর কাজ শুরু করেছে।
প্রতিষ্ঠানগুলো হলো-স্টেমজ হেলথ কেয়ার (বিডি) লিমিটেড, সিএসবিএফ হেলথ সেন্টার, এএমজেড হাসপাতাল লিমিটেড, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, গুলশান ক্লিনিক লিমিটেড ও ডিএমএফআর মলিকুলার ল্যাব অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক এবং জয়নুল হক সিকদার উইমেন্স মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল।
বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি রেমিট্যান্স জোগানদাতা অনেক প্রবাসী শ্রমিক করোনা মহামারিতে কাজ হারিয়ে দেশে আসেন। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হলেও তারা কাজে ফেরার সুযোগ পাচ্ছেন না। বিমানবন্দরে দ্রুত করোনা পরীক্ষা করানোর সুযোগ না থাকায় তারা কর্মক্ষেত্রে যেতে পারছেন না। যাত্রার ৬ ঘণ্টা আগে বাধ্যতামূলক করোনা পরীক্ষার শর্ত দিয়েছে কয়েকটি দেশ। বিমানবন্দরেই আরটি-পিসিআর ল্যাবে করোনা পরীক্ষা করাতে হবে। কিন্তু বিমানবন্দরে আরটি-পিসিআর ল্যাব স্থাপনে দীর্ঘসূত্রতা দেখা দেয়।
দ্রুত ল্যাব স্থাপন ও করোনা পরীক্ষার দাবিতে আন্দোলন-বিক্ষোভ করেন প্রবাসীরা। ল্যাব বসানোর দায়িত্ব কারা পাবে, বিমানবন্দরের কোথায় বসবে এই নিয়ে চলে টানাপোড়েন। অবশেষে সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তের দুই সপ্তাহের বেশি সময় পর বৃহস্পতিবার বিমানবন্দরে আরটি-পিসিআর ল্যাব বসেছে। শনিবার থেকে করোনা পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি।
এদিকে ল্যাব স্থাপনের খবরে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে শনিবার সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশের প্রবাসী কর্মী ও যাত্রীরা হাজির হয়েছিলেন। কিন্তু করোনা পরীক্ষা করাতে না পেরে তারা হতাশা প্রকাশ করেন। ক্ষোভের সঙ্গে অনেকে বলেন, তাদের দুর্ভোগ নিরসনে কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ নেই।
বরং তাদের উদাসীনতায় তারা (প্রবাসী কর্মীরা) বারবার হোঁচট খাচ্ছেন। সিলেটের ওমর আলী বলেন, বিমানবন্দরে এসে কোনো পরীক্ষা করতে পারলাম না। কবে দুবাই যেতে পারব তা জানি না। কুমিল্লার শহীদুল ইসলাম বলেন, বিমানবন্দরে দেখি একেক কর্তৃপক্ষ একেকজনকে দোষারোপ করছে। কিন্তু হয়রানির শিকার হচ্ছি তো আসলে আমরা। এটার একটা সুষ্ঠু সমাধান হওয়া দরকার।