খাগড়াছড়ির রামগড় এলাকায় মা- মেয়ের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সোমবার (৩ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ঘরের তালা ভেঙে খাটের উপর লেপ-তোষকে মোড়ানো অবস্থায় তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ
ঘটনায় স্ত্রী ও শিশু সন্তানকে গলা কেটে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে।নিহতরা হলেন, মা খালেদা আক্তার পিংকী (২৪) ও তার ৪ মাসের শিশু কন্যা সালমা আক্তার।নিহত খালেদার স্বামী মো. সোলেমান
তিনদিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন। এলাকাবাসীর ধারণা, পারিবারিক কলহের জের ধরে স্ত্রী ও সন্তান হত্যা করেছে সোলেমান।পুলিশ ও স্থানীয় এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, রামগড়ের পাতাছড়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর
ওয়ার্ডের মধুপুর গ্রামে পাহাড়ের ঢালুতে অবস্থিত সোলেমানের টিন সেডের তালাবদ্ধ ঘর থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় লোকজন পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ সোমবার সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে গিয়ে তালা ভেঙে ঘরের
ভেতরে খাটের উপর লেপ ও তোষক মোড়ানো অবস্থায় দুটি গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে। পুলিশ ওই ঘর থেকে হত্যায় ব্যবহৃত একটি দা জব্দ করেছে।স্থানীয়রা জানান, বৃহষ্পতিবার (৩০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যার পর থেকে
খালেদার স্বামী মো. সোলেমান নিখোঁজ রয়েছেন। সোলেমান পেশায় একজন রাজমিস্ত্রী। প্রায় আট বছর আগে মধুপুরের জাহেদ আলীর ছেলে সোলেমানের বিয়ে হয় একই এলাকার আব্দুল খালেক দুলালের মেয়ে
খালেদা আক্তারের সঙ্গে। বিয়ের পর থেকে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা ছিল না। এক মামাত বোনের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্করে জের ধরে পারিবারিক কলহ ছিল নিত্যদিন। তাদের সংসারে দুটি কন্যা সন্তান ছিল। ৬
বছরের কন্যাটি থাকে নোয়াখালীতে দাদা বাড়িতে। কয়েকদিন আগেও পারিবারিক কলহের কারণে সালিশ হয়। সর্বশেষ সালিশের পর গত বুধবার (২৯ ডিসেম্বর) রাতে খালেক মেয়ের বাড়িতে দাওয়াত খান। পরদিন
বৃহস্পতিবার রাতে মেয়ে ও মেয়ের জামাইয়ের মোবাইল নম্বরে কল দিয়ে ফোন বন্ধ পেয়ে বেয়াইনকে (সোলেমানের মা) ফোন করে খোঁজ নিতে বলেন। ঘর তালাবদ্ধ দেখে আত্মীয়-স্বজনরা সম্ভাব্য বিভিন্ন
জায়গায় তাদের খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেন।সোমবার (৩ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টার দিকে এলাকার লোকজন তালাবদ্ধ ঘর থেকে দুর্গন্ধ পেয়ে স্থানীয় নাকাপা ফাঁড়ির পুলিকে খবর দেন। পরে রামগড় থানায় রামগড়
সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হোসাইন মোহাম্মদ রায়হান কাজেমী ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সামছুজ্জামনের নেতৃত্ব পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে যায়। পুলিশ দরজার তালা ভেঙে ঘরের
ভেতরে খাটের উপর থেকে লাশ দুটি উদ্ধার করে।রামগড় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সামছুজ্জামন বলেন, স্বামীর পরকীয়ার কারণে পারিবারিক কলহের জেরে এ জোরা খুনের ঘটনা ঘটেছে বলে
প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে।তিনি বলেন, ধারণা করা হচ্ছে- সোলেমান প্রথমে স্ত্রী খালেদা আক্তারকে দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যার করেন। পরে ৪ মাসের কন্যা শিশুকেও গলা কেটে হত্যা করে। পরে লেপ তোষক দিয়ে লাশ
দুটি মুড়িয়ে রেখে ঘরে তালা দিয়ে পালিয়ে যান। বৃহস্পতিবার রাতেই এ হত্যাকাণ্ড হয়। শুক্রবার সকালে নাকাপা বাজারে রাস্তার পাশে বাসের জন্য তাকে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।ওসি আরও জানান, নিহত খালেদা আক্তারের বাবা আব্দুল খালেক দুলাল মেয়ে ও নাতনীর হত্যার ঘটনায় সোলেমানকে আসামি করে হত্যা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।