প্রতিমাসে বিনামূল্যে ৩০ কেজি করে চাল পাবেন ১০ লাখ ৪০ হাজার অসচ্ছল নারী। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে এ উদ্যোগ শুরু হচ্ছে, যা অব্যাহত থাকবে পরবর্তী দুই বছর। শুধু খাদ্য সহায়তাই নয়, কর্মসূচির আওতাভুক্ত সব উপকারভোগীকে সঞ্চয় ব্যবস্থাপনারও আওতায় আনা হবে।
এ লক্ষ্যে নির্বাচিত উপকারভোগীদের পৃথকভাবে প্রত্যেককে একটি ব্যাংক হিসাবও খুলে দেওয়া হবে। সেই অ্যাকাউন্টে প্রতিমাসে নিজে ২৪০ টাকা সঞ্চয় জমা করবেন উপকারভোগীরা, যা হবে তাদের ক্ষুদ্র ব্যবসা পরিচালনার জন্য প্রাথমিক মূলধন গঠন।
একইসঙ্গে তাদের দেওয়া হবে যথোপযুক্ত প্রশিক্ষণ। সঞ্চয় করা অর্থ এবং প্রশিক্ষণে প্রাপ্ত জ্ঞান কাজে লাগিয়ে আগামী দুই বছরের মধ্যে ক্ষুদ্র ব্যবসার মাধ্যমে এই নারীদের আত্মনির্ভরশীল করে তোলা হবে। ফলে তারা আয়বর্ধক এবং ক্ষুদ্র ব্যবসা পরিচালনার মাধ্যমে অর্থনীতিতে অবদান রাখতে সক্ষম হবেন।
খাদ্য, পুষ্টি ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতা দূর করে অসচ্ছল এবং অক্ষম নারীদের আর্থিক সচ্ছলতা নিশ্চিত করতে ‘ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট প্রোগ্রাম (ভিডব্লিউবি) নতুন কর্মসূচির আওতায় এমন উদ্যোগ নিচ্ছে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
দায়িত্বশীল সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট প্রোগ্রাম হলো মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় বাস্তবায়িত দেশের গ্রামীণ দুস্থ নারীদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে একটি বৃহত্তর সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি।
তবে নতুন কর্মসূচিতে সারা দেশে ৬৪ জেলার ৪৯২ উপজেলার সব ইউনিয়ন অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। যা ২০২৫-২৬ সালে উপকারভোগী বাড়িয়ে ১৫ লাখে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
সোমবার (৭ নভেম্বর) ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট কার্যক্রমের (ভিডব্লিউবি) ২০২৩-২৪ এর উপকারভোগী নির্বাচনের জন্য ভিডব্লিউবি এমআইএস ওয়েব পোর্টাল এবং ভিডব্লিউবি অ্যাপ উদ্বোধন করা হয়েছে। সেই অনুষ্ঠানে চাল দেওয়ার বিষয়টি জানানো হয়।
সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা এই কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এ সময় মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল, মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফরিদা পারভীন ও অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ওয়াহিদ্দুজামানসহ এটুআই ও বিশ্বখাদ্য কর্মসূচির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, নতুন কর্মসূচিতে উপকারভোগী হবেন অসচ্ছল, বিধবা ও তালাকপ্রাপ্তা নারী, যাদের পরিবারের নিয়মিত উপার্জনক্ষম সদস্য বা নিয়মিত আয় নেই এমন নারী। যারা ভূমিহীন ও নিজ মালিকানা জমির পরিমাণ ০.১৫ শতকের কম। তবে তাদের বয়স হতে হবে ২০ থেকে ৫০ বছর বয়সী।
এ ছাড়া যেসব পরিবার দিনমজুর হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করে এবং মাটির দেয়াল/পাটকাঠি বা বাঁশে তৈরি ঘরে থাকে, যে পরিবারে কিশোরী বা ১৫-১৮ বছর বয়সী মেয়ে, অটিজম/প্রতিবন্ধী সন্তান এবং বিদেশ থেকে প্রত্যাগত অভিবাসী হয়েছেন এমন নারীরা অগ্রাধিকার পাবেন।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হালনাগাদ উপজেলার পোভার্টি ম্যাপ অনুযায়ী উপজেলাভিত্তিক এসব উপকারভোগী নির্বাচন করা হবে। উপকারভোগীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে আগ্রহী নারীরা দেশে সব ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার, তথ্য আপা, স্থানীয় কম্পিউটারের দোকান থেকে ১০৯ ও ৩৩৩ হটলাইন নম্বরে কল করে আবেদন করতে পারবেন।
তবে পার্বত্য ও দুর্গম এলাকা যেখানে ইন্টারনেট সংযোগ নেই সেখানে মোবাইল অ্যাপ ভিডব্লিউবির মাধ্যমে অফলাইনে আবেদনের সুযোগ রয়েছে। আবেদন প্রক্রিয়া চলবে ৭ নভেম্বর থেকে আগামী ২১ নভেম্বর পর্যন্ত।