সরকারি পূর্ত কাজের একটি অভিন্ন দর-তফসিল নির্ধারণ চলতি বছরেই চূড়ান্ত করা হতে পরে। দর চূড়ান্ত করার জন্য ইতিমধ্যে অর্থমন্ত্রণালয়ে কয়েক দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেই বৈঠকে অভিন্ন দর
নির্ধারণে প্রণীত এক খসড়া প্রস্তাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আলোচনা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেছিলেন বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আওতায় বাস্তবায়নাধীন বিভিন্ন পূর্তের (বিভিন্ন নির্মাণ কাজ) একই ধরণের কাজে বিভিন্ন দর নির্ধারিত রয়েছে। এখন এই দরকেই আগামীতে একটি অভিন্ন দর তফসিলে (সিডিউল অফ রেইট) নিয়ে আসা হবে।
দর নির্ধারণ কাজ চূড়ান্ত করার জন্য অর্থ বিভাগের আওতায় একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ৬ সদস্য বিশিষ্ট এই কমিটির সভাপতি করা হয়েছে অর্থ বিভাগের ব্যয় ব্যবস্থাপনার অতিরিক্ত সচিবকে। কমিটির অন্যান্য
সদস্য হচ্ছেন-পরিকল্পনা কমিশনের একজন প্রতিনিধি (যুগ্মসচিব পদমর্যাদার নীচে নয়) সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি (যুগ্ম সচিবের নীচে নয়), বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের
পুরকৌশল বিভাগের একজন অধ্যাপক, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের/বিভাগের অধীনস্থ দপ্তরের দপ্তর প্রধান এবং কমিটিতে সদস্য সচিব হিসেবে রাখা হয়েছে অর্থ বিভাগের ব্যয় ব্যবস্থাপনার যুগ্ম সচিব।
জানা গেছে, কমিটির জন্য ৬টি কার্য পরিধি নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এই কার্য পরিধির মধ্যে রয়েছে-বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ হতে প্রাপ্ত খসড়া দর-তফসিল পর্যালোচনা ও পরীক্ষা করা এবং বিভিন্ন আইটেমের একক দর চূড়ান্ত করা। পূর্ত কাজের জন্য
বিভিন্ন দপ্তর দর-তফসিলের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করা। প্রাপ্ত খসড়া দর-তফসিল সংশ্লিস্ট দপ্তর/সংস্থায় কত দিনের জন্য কার্যকর থাকবে তা নির্ধারণ করা । চূড়ান্ত দর-তফসিল প্রয়োগে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/সংস্থার মধ্যে
কোনো প্রকার জটিলতা সৃষ্টি হলে তা সমাধান করা। চূড়ান্ত দর-তফসিলের যে কোনো প্রকার সংশোধন, পরিবর্ধণ, পরিমার্জন করা। প্রয়োজনবোধে এ কমিটি নতুন সদস্য অন্তভূর্ক্ত (কো-অপ্ট) করতে পারবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, গত ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক আন্ত:মন্ত্রণালয় সভায় এই কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। সেই সভায় সরকারি পূর্ত কাজের
একটি অভিন্ন দর নির্ধারণ প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে আলোচনা করা হয়। সেখানে বলা হয়েছে, সরকারের পূর্ত বা বিভিন্ন নির্মাণের কাজের মধ্যে সামঞ্জস্যহীনতা বিরাজ করছে। দেখা গেছে, একটি মন্ত্রণালয় বা বিভাগের একটি কাজের
দর-তফসিল ১০ বছরের ২০ বার পরিবর্তন করা হয়েছে। আবার কোনটি ৫ বার পরিবর্তন করা হয়েছে। একই কাজে দর-তফসিল মন্ত্রণালয় বা বিভাগ ভেদে ব্যাপক মাত্রায় তারতম্য হচ্ছে। এক্ষেত্রে কোনো নীতিমালা অনুসরণ করা হয়নি।
সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা এ বিষয়ে বলেছেন, ধরা যাক-কোনো মন্ত্রণালয় বা বিভাগ তার নির্মাণ কাজের জন্য একটি ইটের দর দিয়েছে ১০০ টাকা। আবার অন্য মন্ত্রণালয় বা বিভাগ তাদের নির্মাণ কাজে জন্য ব্যবহ্নিত একই ধরণের ইটের দর দিয়েছে ২০০
টাকা। কোনো নির্দিষ্ট পণ্য বা উপকরণের দর বছর বছর বাড়ানোর নজিরও রয়েছে। এতে করে সরকারি অর্থের একদিকে যেমন অপচয় হচ্ছে, অন্যদিকে, এখানে অনিয়ম বা দুর্নীতির অবকাশও থেকে যাচ্ছে। এই প্রচেষ্টা বন্ধ করার জন্য এখন নতুন করে
সরকারি পূর্ত কাজের দর-তফসিল নির্ধারণ বা সংশোধন করার উদ্যোগটি নেয়া হয়েছে। এতে করে একই ধরণের কাজের জন্য বিভিন্ন উপকরণের দাম মন্ত্রণালয় বা বিভাগ ভেদে ‘আকাশ-পাতাল’ পার্থক্য হবার সুযোগ কম থাকবে।