বিজয়ের বাংলা:
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর পর পরি এবার সময়ের আলোচিত বক্তা মিজানুর রহমান আ’জহারীর যুক্ত’রাজ্যে প্রবেশ নি’ষিদ্ধ করা হয়েছে। সর্বশেষ আইনি লড়াইয়ে হেরে গেছেন তিনি। গত ১৮ অক্টোবর লন্ডনের হাইকোর্টে
কুইন বেঞ্চ ডিভিশনে মিজানুর রহমান আজহারীর ব্রিটেনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে করা মামলার জুডিশিয়াল রিভিউর শু’নানি অনুষ্ঠিত হয়। বিচারক জাস্টিন থ্রোনটন শুনানিশেষে আজহারীর ভিসা বাতিলের পক্ষে রায় দেন। জানা গেছে, ৩১ অক্টোবর একটি ইসলামী কনফারেন্সে যোগ দিতে মালয়েশিয়া থেকে লন্ডনের উদ্দেশ্যে যাত্রা
করেছিলেন মিজানুর রহমান আজহারী। কিন্তু লন্ডনে আসার পথে কাতারে ট্রানজিটে আটকা পড়েন তিনি। কা’তারের ইমিগ্রেশন থেকে আজহারীকে লন্ডনের বিমানে উঠতে দেয়া হয়নি। দুই দিন দেন দরবারের পরে ব্রিটিশ সরকার তার ভিসা বাতিল করে দেয়। আজহারীর ভিসা বাতিল নিয়ে বাংলাদেশি ক’মিউনিটিতে অক্টোবর থেকেই
আলোচনা চলছিলো। সর্বশেষ ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এমপি বব ব্ল্যাকম্যান আজহারীর যুক্তরাজ্য সফরের নিষেধাজ্ঞা চেয়ে বক্তব্য রাখায় আরো বেশি গুরুত্ব পায়। সংসদে বব বলেন,আজহারীর বক্তব্যে ব্রিটেনের মুসলিম ক’মিউনিটি বৃহৎ অংশ বিভ্রান্ত হতে পারে, সমাজে ঘৃণা ছড়াতে পারে, তাই তাকে ব্রিটেনে প্রবেশ করতে না দেয়া ভালো।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের ঘৃণা ছড়ানো ইসলামিক বক্তা মাওলানা আজহারীকে লণ্ডনে রয়েল রিজেন্সী হলে ইসলামী কনফারেন্সে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, সে যুক্তরাজ্যে আসার জন্য কাতারে এসে আটকে আছে। এরকম ঘৃণা ছড়ানো ব্যক্তি যে হিন্দু এবং ইহুদি ধর্মের প্রতি ঘৃ’ণা ছড়ায়
তাকে ব্রিটেনে ঢুকতে দয়া ঠিক হবে না। মিজানুর রহমান আজহারী ব্রিটেনে ঢুকলে তার বক্তব্যের মাধ্যমে এখানকার শা’ন্তিপ্রিয় বৃহৎ মুসলিম জনগোষ্ঠী ভুল তথ্য পেয়ে বিভ্রান্ত হতে পারে। এমনকি সে অনলাইনেও এই ধরনের ঘৃ’ণা ছড়াতে পারে। ব্ল্যাক ম্যান এমপির এই বক্ত’ব্যের পর সংসদ লিডার স্যার জ্যাকব রিস বলেন,
বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ, এই দেশে ঘৃ’ণা ছড়ানো একটি মা’রাত্নক অপরাধ। ঘৃণা ছড়ায় এমন কাউকে আমরা এই দেশে প্রবেশ করতে দিতে পারি না। ঘৃ’ণা ছড়ানোর বিরুদ্ধে আমাদের একটি অবস্থান রয়েছে সেটার ভিত্তিতে হোম সেক্রেটারীর কাছে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। এরপর আজহারীকে ব্রিটেনে নিয়ে আসতে আয়োজক, আতাউল্লাহ
ফারুক একটি পিটিশন ক্যাম্পেইন শুরু করেছিলন। মিজানুর রহমান আজহারী নিজে এবং তার ফেসবুকে এই সংক্রান্ত একটি বক্তব্য প্রচার করে পিটিশনে তার পক্ষে স্বাক্ষর দেয়ার অনুরোধ জানান, সর্বশেষ সে’খানে প্রায় ৩৯ হাজার মানুষ স্বাক্ষর করেন। তবে এতো কিছু করেও শেষ রক্ষা
হয়নি আজহারীর। ৩১ অক্টোবর থেকে লণ্ডনসহ ব্রিটেনের ৬টি শহরে ইসলামী বক্তব্যের আয়োজন করা হয় ব্রিটেনের আইওন টিভির পক্ষ থেকে। এই অনুষ্ঠান উ’পলক্ষে সারা ব্রিটেনের বিভিন্ন শহরে ১৫ পাউন্ড থেকে ১০০ পাউণ্ডের মূল্যের ১২ হাজার টিকিট বিক্রি হয়েছিল। মিজানুর রহমান আজহারীর যুক্তরাজ্যে সফরের সংবাদ
প্রকাশের পর থেকেই কমিউনিটিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ছিল। অনেকেই আয়োজক আইওন টিভির ব্যানারে আজহারীর আগ’মনকে স্বাগত জানিয়েছেন আবার একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি থেকে শুরু করে প্রগতিশীল এবং মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের অনেক মানুষ আজহারীর সফরের বিরোধীতা করে আসছিলেন। অনেকেই ব্রিটিশ এমপি থেকে
শুরু করে হোম অফিসসহ বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট জায়গায় মিজানুর রহমান আজহারীর বিভিন্ন বক্তব্য যেখানে অন্য ধর্মকে আ’ঘাত করা হয়েছে,যেসব বক্তব্য ঘৃণা ছড়ায় এমন সব ভিডিও পাঠানো হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০০৬ সা’লে ৪ দলীয় জোট সরকারের সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায় দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীকেও যুক্তরাজ্যে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।