বিজয়ের বাংলা:
(পর্ব – ৩) গত পর্বে আলোচনা করা হয়েছে ইলমের গুরুত্ব ও ফজিলত। আজকের আলোচনা হলো ইলম অর্জনকারীর মর্যাদা। ** আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআনের বিভিন্ন জাগায় ও হাদীসেও ইলম অন্বেষণের গুরুত্ব এবং ইলম
অর্জনকারীর গুরুত্ব তুলে ধরেছেন।”রাসুল সাঃ বলেন, যেকোনো মুসলিম, আল্লাহ যা কিছু ফরজ করেছেন তার একটি, দুইটি, তিনটি, চারটি অথবা পাঁচটি শিখবে এবং সেগুলো অন্যকে শিখাবে, বিনিময়ে সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে।”**রাসুল সাঃ বলেছেন,”যে ব্যক্তি
জ্ঞান অন্বেষণের উদ্দেশ্য কিছু পথ অতিক্রম করে আল্লাহ তার বিনিময়ে তার জান্নাতের পথ সুগম করে দেন। আল্লাহর ঘরসমূহের মধ্য থেকে কোনো একটি ঘরে যখন কোনো একটি সম্প্রদায় / দল সমবেত হয়ে আল্লাহর কিতাব পাঠ করে এবং
পরস্পরকে পাঠ করে শোনায় তখন ফেরেস্তা তাদেরকে ঘিরে রাখে। তাদের উপর প্রশান্তি অবতীর্ণ করে। দয়া ও অনুগ্রহ তাদেরকে আচ্ছাদিত করে রাখে এবং আল্লাহ তার পাশে যারা আছেন তাদের সাথে এদের বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। ” ** তিনি আরো বলেন,
ফেরেস্তাকুল শিক্ষার্থীর কাজে সন্তুষ্ট হয়ে তার জন্য নিজেদের ডানা মেলে দেয়, আকাশ ও পৃথিবীতে যারা আছে সকলে, এমনকি পানির মধ্যে মাছ ও জ্ঞানী ব্যক্তির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আবিদ ব্যক্তির উপর আলিম ব্যক্তির মর্যাদা এমন অত্যুজ্বল মর্যাদা। আলিমগণ আম্বিয়ায়ে কেরামের
ওয়ারিশ তথা উত্তরাধীকারী। আর আলেমগণ উত্তরাধীকারী হিসাবে দিনের দিরহাম ছেড়ে যাননি, তারা ইলম তথা জ্ঞান রেখে যান। যে তা গ্রহণ করবে সে পরিপূর্ণতা অর্জন করে। ” অর্থাৎ ইলম অর্জনকারীর সবচেয়ে বড় মর্যাদা আল্লাহর সন্তুষ্টি
অর্জন এবং জান্নাতের উত্তরাধীকারী হওয়া। রাসুল সাঃ বলেছেন, ” দু’টি জিনিস ছাড়া আর কোন কিছুর জন্য ঈর্ষা করা ঠিক নয়। একজন মানুষ, আল্লাহ যা সম্পদ দিয়েছেন এবং সঠিক পথে তা ব্যয় করার ক্ষমতাও দান করেছেন। আরেকজন মানুষ, আল্লাহ যাকে জ্ঞান দান দিয়েছেন, তা দিয়ে সে সঠিক বিচার করে এবং সে জ্ঞান
অন্যকে শেখায়। ” আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্নিত, রাসুল সাঃ বললেন, ” উত্তম সাদাকা হলো, একজন মানুষকে কোন জ্ঞান শিখবে, এবং তা অন্য একজন মুসলিম ভাইকে শিখাবে। ” ” রাসুল সাঃ মসজিদে অনুষ্ঠানরত দু’টি মজলিসের পাশ দিয়ে যাচ্চিলেন। একটি মজলিসে
আল্লাহর নিকট দুআ ইসতেগফার ও তার নিকট আশা-আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করা হচ্ছিল। আর অন্যটিতে চলছিল দ্বীনের বিধি বিধান শেখানোর কাজ। তিনি ( রাসুল সাঃ) মন্তব্য করলেন দুটি মজলিসেই কাজ ভালো হচ্ছে। তবে একটি অপরটির চেয়ে বেশি ভালো। এই যে তারা আল্লাহর নিকট দুআ করছে, তার আশা-আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছে, তিনি ( আল্লাহ)
ইচ্ছা করলে তাদেরকে দিতে পারেন। আর ইচ্ছা করলে না ও দিতে পারেন। আর এরা দ্বীনের ফিকহ ও ইলম তথা জ্ঞান শিখছে এবং মূর্খদের তা শিখাচ্ছে। এরাই উত্তম আর আমিতো ( রাসুল সাঃ) মুয়াল্লিম বা শিক্ষক হিসাবে প্রেরণ হয়েছি। একথা বলে তিনি শেষোক্ত মজলিসে বসে পড়লেন।” হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্নিত রাসুল সাঃ বলেন, তোমরা জ্ঞান অর্জন করো।
আর জ্ঞানের স্বার্থে মানসিক প্রশান্তি ও গাম্ভীর্য আয়ত্ত করো এবং যার নিকট থেকে জ্ঞান অর্জন করা হয় তার সামনে বিনয়ী হও।” হযরত আলী রাঃ বলেন, জেনে রাখ মানুষ সৎকর্মশীল। প্রত্যেকটি মানুষের মর্যাদা তার ভালো কাজের মধ্যে। তোমরা জ্ঞানের বিষয়ে কথা বলো,
তোমাদের মর্যাদা স্পষ্ট হয়ে যাবে।” উপরোক্ত হাদিস এবং বর্ণনা গুলোতে খুবই চমৎকার ভাবে একজন ইলম অন্বেষণকারীর মর্যাদা, সম্মান, গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। দুনিয়া ও আখেরাতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ও মানুষের ভালোবাসা পেতে এবং সফল হতে সঠিক নিয়তে ইলম চর্চা
ও আমলের বিকল্প নেই। তাই আমাদের সকলের একান্ত প্রয়োজন জ্ঞান অর্জন করা।👉আগামী পর্ব আসছে ইলম ও আমলের সম্পর্ক। সে পর্যন্ত সকলকে জাযাকাল্লাহু খাইরান👈 ✍️ লেখিকা ঃ সুলতানা তাছলিমা রুপালি ✍️ ( চট্টগ্রাম ) অধ্যয়ণরত ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি