আগামী ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার ইউপি নির্বাচনে নৌকার বৈঠা যোগ্য মাঝির কাছে না দেয়ার কারণে প্রতিটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত নির্বাচন হলে জনতার ভোটের স্রোতে বেশিরভাগ
ইউনিয়নে নৌকাডুবির আশঙ্কা স্থানীয় রাজনৈতিক মহল ও সাধারণ মানুষের। চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে ১২ ইউনিয়নে মাঠে রয়েছেন আওয়ামী লীগেরই একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী। স্থানীয় এমপি ও জেলা প্রশাসন বলেছেন নির্বাচন হবে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ।
এই ঘোষণার পর থেকেই প্রার্থীরা চাঙ্গা মনোবল নিয়ে নেমে পড়েছেন প্রচারণায়, দিন-রাত চলছে মিটিং, মিছিল, উঠান বৈঠক ও গণসংযোগ। ভোটারদের কাছে দিচ্ছেন উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি। আওয়ামী বিরোধী পক্ষের নিরব সমর্থন পেয়ে শক্ত অবস্থানে রয়েছে বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা,
পাল্টে যাচ্ছে ভোটের হিসাব-নিকাশ। জানা গেছে, ভোটের হিসেব পাল্টে দেয়ার প্রত্যয় নিয়ে যে সব বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা দিন-রাত নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন তারা হলেন বীরগাঁও ইউনিয়নে নবীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও বর্তমান চেয়ারম্যান হাজী কবির
আহমেদ। তিনি দুবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন। বীরগাঁও ইউনিয়নে ভোট হবে ইভিএমএ। নবীনগর পশ্চিম- পৌর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো: নুর আলম (নুর আজ্জম)। তিনি সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া গোলাপের ভাগিনা। নবীনগর পূর্ব-
ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী আবদুল্লাহ আল মামুন ও বিদ্রোহী প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো: সামুল হক একই গ্রামের বাসিন্দা। সলিমগঞ্জ ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী মাইনুল হক সিকদার ও বিদ্রোহী প্রার্থী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সলিমগঞ্জ ইউনিয়নের দুবারের
সাবেক চেয়ারম্যান খোরশেদ রহমানের ছেলে আশিকুর রহমান সোহেল একই গ্রামের বাসিন্দা হওয়ার কারণে চলছে নিরব ভোটের লড়াই।শ্যামগ্রাম ইউনিয়নে কৃষকলীগ নেতা শাহজাহান সিরাজ গত ইউপি নির্বাচনে নৌকা নিয়ে পরাজিত হয়েছিলেন। এবার ভোটারের সহানুভূতি
আদায়ের চেষ্টা করছেন। রসুল্লাবাদ ইউনিয়নে নৌকার মনোনীত প্রার্থী আলী আকবর ও বিদ্রোহী প্রার্থী ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি খন্দকার মনির হোসেন একই গ্রামের বাসিন্দা, চলছে ঠাণ্ডা লড়াই।রতনপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও শ্রীকাইল কলেজের সাবেক ভিপি গোলাম মোস্তফা মারুফ, সাতমোড়া-প্রবাসী মোশারফ হোসেন সরকার ও সাবেক চেয়ারম্যান মো: শাহজাহান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
লাউর ফতেহপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম লড়ছেন বিদ্রোহী হয়ে। জিনদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য রবি উল্লাহ রবি নিজ এলাকাবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করে চালিয়ে যাচ্ছেন প্রচার-প্রচারণা। দলমত নির্বিশেষে সকল মানুষের কাছে করছেন ভোট প্রার্থনা। ইব্রাহিমপুরে হাজী নোমান চৌধুরী দুই বারের সাবেক চেয়ারম্যান। নিজ গ্রামের সম্মান রক্ষা করতে প্রতিটি ঘরে ঘরে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। শ্রীরামপুরে লড়ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য কাজী জাকি উদ্দিন জাকির ও সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম জালাল উদ্দিনের স্ত্রী খাইরুনাহার লিপি।
১২টি ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থীরা আওয়ামী বিরোধী পক্ষের ও আওয়ামী লীগের একাংশের নিরব সমর্থন পেয়ে শক্ত অবস্থানে থাকার কারণে কারা হচ্ছেন পরবর্তী চেয়ারম্যান, তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছেন না। অপরদিকে, প্রার্থীদের মধ্যে অজানা এক আতঙ্ক কাজ করছে। তারা বলছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে সবাই শতভাগ আশাবাদী নির্বাচিত হওয়ার। কেউ কেউ বলছেন দলীয় প্রার্থীর লোকজন প্রভাব খাটাতে গেলে দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও হতাহত হবে, কারণ সবাই আওয়ামী লীগ, জীবন দিবে তারপরও কেউ কাউকে ছাড় দিবে না।
এ ব্যাপারে এবাদুল করিম বুলবুল এমপি বলেন, ‘নবীনগরে নির্বাচন হবে শতভাগ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ। জনগণ যাকে ভোট দিবেন তিনি নির্বাচিত হবেন। এখানে আতঙ্কিত হওয়ার কিছুই নেই। জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খাঁন বলেছেন, নাসিরনগরের চেয়ে আরো শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নবীনগরে অনুষ্ঠিত করার জন্য আমাদের সকল প্রস্তুতি রয়েছে।