বিজয়ের বাংলা: বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জের আবুল বাশার সৌদি আরবে গিয়ে বিনা দোষে জেল খাটছেন। মাদক পাচারের অভিযোগে তাকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। বিনা দোষে স্বামীর কারাদণ্ডের খবরে তার মুক্তির জন্য বাশারের স্ত্রী রাবেয়া দেশের বিভিন্ন দপ্তরের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। স্বামীর ৮ লাখ টাকার ঋণ পরিশোধ করতে তিনি পাঁচ বছরের মেয়েকে নিয়ে কাজের সন্ধানে ঢাকায় ঘুরছেন।
এদিকে বাশারের কারাদণ্ডের বিষয়ে সৌদিতে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে বলা হয়েছে-রোববার বাশারের বিরুদ্ধে দেশটির আদালত রায় দিয়েছেন। রায়ের কপিও দূতাবাসের হাতে এসেছে। আপিল করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। যতদূর যেতে হয় দূতাবাস যাবে। জানা যায়, বাশার বিমানবন্দর থেকে যাওয়ার সময় একজন পরিচ্ছন্নকর্মী জোর করে আচারের কথা বলে ব্যাগে ইয়াবা দিয়ে দেন। সেটা নিয়ে সৌদি আরব পৌঁছার পর মাদক পাচারের মামলায় অভিযুক্ত হন আবুল বাশার।
অবশ্য বিমানবন্দরের সিটিটিভির ফুটেজ এবং বিমানবন্দরের সেই পরিচ্ছন্নতাকর্মীর স্বীকারোক্তিতে প্রমাণ হয়েছে আবুল বাশার নিরপরাধ। আচারের কথা বলে এবং ভয় দেখিয়ে জোর করে তার ব্যাগে ইয়াবা ঢুকিয়ে দিয়েছেন অভিযুক্ত নুর মোহাম্মদ। বাশারের স্ত্রী রাবেয়ার করা মামলায় একে ট্রেডার্সের এসআর সুপারভাইজার নুর মোহাম্মদকে গ্রেপ্তার করা হলেও এরই মধ্যে তিনি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন বলে জানা গেছে। স্বামীকে ফিরে পেতে স্ত্রী রাবেয়া তাকিয়ে আছেন সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দিকে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন তিনি। যোগাযোগ করছেন সৌদি দূতাবাসের সঙ্গেও। মঙ্গলবার প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন রাবেয়া। মন্ত্রী বিস্তারিত শুনে রাবেয়ার সামনেই কথা বলেন জেদ্দায় লেবার কাউন্সিলর আমিনুল হকের সঙ্গে। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করাসহ সব ধরনের সহযোগিতার জন্যও নির্দেশনা দেন মন্ত্রী।
রাবেয়ার দাবি, নির্দোষ বাশারের মুক্তির জন্য বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরে কোনো সমাধান পাচ্ছেন না। সরকারের কাছে তার আকুল আবেদন-বাশারের মুক্তির জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো যেন ব্যবস্থা নেয়। পাঁচ বছরের মেয়েকে নিয়ে স্বামীর মুক্তির জন্য তিনি সরকারের ঊর্ধ্বতনদের দিকে তাকিয়ে আছেন। তিনি বলেন, সাত বছর আগে তাদের বিয়ে হয়েছে। বিয়ের আগে থেকে বাশার সৌদিতে কাজ করছেন।
বিমানবন্দর থানায় রাবেয়ার করা মামলার এজাহারে বলা হয়-আবুল বাশার বহির্গমন টার্মিনালের ৪নং গেট দিয়ে এ বছরের ১১ মার্চ বিমানবন্দরে ঢোকেন। মালামাল পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর রাত ১২টা ২০ মিনিটের দিকে বিমানের বোর্ডিং পাস সংগ্রহ ও মালামাল তোলার জন্য তিনি লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। মেঝেতে হাতব্যাগ রাখার পর হঠাৎ নূর মোহাম্মদ তাকে একটি প্যাকেট নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। অপরিচিত নূর মোহাম্মদের দেওয়া প্যাকেট নিতে তিনি অস্বীকার করেন।
এ সময় নূর মোহাম্মদ নিজেকে বাংলাদেশ বিমানের কর্মকর্তা বলে পরিচয় দেন। তিনি বলেন, প্যাকেটটি না নিলে তাকে প্লেনে উঠতে দেবেন না। এরপর বাশারকে ইয়াবার প্যাকেট নিতে বাধ্য করা হয়। বাশারের ব্যাগের চেন খুলে প্যাকেটটি সেখানে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। পরে বিমানবন্দরের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পুলিশও তার প্রমাণ পায়। প্যাকেটে আচার ও কিছু খাবার আছে বলে নূর মোহাম্মদ শেষ পর্যন্ত বাশারের ব্যাগে ঢুকিয়ে দেন।
বলেন, তার ভাই মো. সাঈদ জেদ্দা বিমানবন্দর থেকে প্যাকেটটি নিয়ে যাবেন। তখন সময় রাত ১২টা ৫০ মিনিট। বাশার ভয় পেয়েছিলেন এবং হাতেও সময় ছিল কম। তিনি কথা না বাড়িয়ে বিমানে ওঠেন। জেদ্দা বিমানবন্দরে পৌঁছালে পুলিশ তার ব্যাগ পরীক্ষা করে ইয়াবা উদ্ধার করে। সৌদিতে বাশার পৌঁছাতে পেরেছেন কি না, সে খবর পাচ্ছিলেন না রাবেয়া।
১২ মার্চ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে অজ্ঞাতনামা একজন জানতে চান তার স্বামী বাশারের কাছে একটি প্যাকেট দেওয়া হয়েছিল, সেটি পৌঁছাতে পেরেছেন কি না? তিন সপ্তাহ পর বাশার ফোনে পুরো ঘটনা রাবেয়াকে জানান। এরপর রাবেয়া বিমানবন্দর থানায় মামলা করেন। তবে প্রথমে রাবেয়া থানায় জিডি করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। পরে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করলে তারা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে নূর মোহাম্মদকে শনাক্ত করেন। তাকে থানায় মামলা করতেও সহযোগিতা করা হয়।
১৫ এপ্রিল রাবেয়া মামলা করেন। ইতিমধ্যে জেদ্দাস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ঘটনার বাস্তব অবস্থা তুলে ধরে চিঠিও দিয়েছে। জেদ্দায় লেবার কাউন্সিলর আমিনুল হক জানিয়েছেন, গত রবিবার সৌদি আদালত রায় দিয়েছে। রায়ের কপি তারা হাতে পেয়েছেন। আপিলের প্রস্তুতি চলছে। বিষয়টি নিয়ে যত দূর যেতে হয়, তারা যাবেন।