রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের বাসিন্দা মাহফুজ আলম। তার ছেলে সিয়ামের (২) ডায়রিয়া শুরু হলে সেদিনই একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান বাচ্চাকে। দুই দিন হাসপাতালে রাখার পর সুস্থ হলে বাসায় নিয়ে আসেন। হঠাৎ ১৭ জানুয়ারি রাতে আবারও ডায়রিয়া শুরু হয়। তখন নিয়ে যাওয়া হয় আইডিডিআর’বিতে। সেখানে দুই ঘণ্টা রাখার পরই সুস্থ হয়ে ওঠে সিয়াম।
মাহফুজ আলম সোনালীনিউজকে জানান, প্রথমবার ডায়রিয়ার সঙ্গে জ্বরও ছিলো তার ছেলের। তখন চিকিৎসক রোগীকে হাসপাতালে রেখেছিলেন। সুস্থ হওয়ার পর চিকিৎসক তাকে জানিয়েছেন, সম্পূর্ণ সুস্থ হতে ১৫ দিন সময় লাগবে। কিন্তু সপ্তাহ খানেক যেতেই একই অবস্থা হলে সেই চিকিৎসক বাচ্চাকে আইসিডিডিআরবি’তে নিয়ে যেতে পরামর্শ দেন।
চিকিৎসকের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, এখন যারাই ডায়রিয়া আক্রান্ত হচ্ছেন সুস্থ হতে সময় লাগছে।এটি ভাইরাস ফিবারসহ ডায়রিয়া। তাই সময় লাগছে।
মোহম্মদপুরের বাসিন্দা হাসিনা বেগম সকালে সোনালীনিউজকে বলেন, ‘আমার স্বামী রিকশাচালক। তিনি গতকাল হঠাৎ করে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হন। তাকে আইসিডিডিআরবিতে নিয়ে আসি। এখানে একদিন রাখার পর আজ বেশ ভালো আছেন। কিছুক্ষণ পর নিয়ে যাবো।’
এদিকে, এখন প্রতিদিন প্রায় পাঁচশো ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে আসছেন বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর’বি) হেড অব হাসপাতাল ডা. বাহারুল আলম।
বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) বিকেলে সোনালীনিউজকে ডা. বাহারুল বলেন, আজকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২৯৫ জন। তবে এরা সবাই যে ভর্তি থাকেন তা নয়। এদের মধ্যে অনেকে সুস্থ হয়ে বাড়িও ফিরে গেছেন। আমরা এই সব রোগীদের বলি ‘ডেইলি পেশেন্ট ভিজিট’। এই রোগীর সংখ্যা গত এক সপ্তাহ ধরে ছিলো প্রতিদিন চারশোর ওপরে কিন্তু পাঁচশোর নিচে। রোগীদের অবস্থা মারাত্মক নয়। যারা আসছেন সকলে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে রোগীদের পুরোপুরি সুস্থ হতে কিছুটা সময় লাগে। সেটা সর্বোচ্চ ১৫ দিন। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রোগী সুস্থ হওয়ার সময় ৫ থেকে ৭ দিন। অনেক সময় তিন চারদিনেও ঠিক হয়ে যায়।
নতুন কোনো ভাইরাস জনিত জ্বর ও ডায়রিয়ার লক্ষণ পাওয়া গেছে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ডায়রিয়ার নতুন কোনো ভাইরাস আমরা পাইনি। এটি গবেষণার বিষয়। তবে যারা ডায়রিয়া রোগী বেশি হ্যান্ডেল করেন তারা হয়তো ভালো বলতে পারবেন।
ডা. বাহারুল বলেন, ডায়রিয়া রোগী কখনোই তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠে না। এতে সময় লাগে। ‘ইমোটিল’ খাওয়ালে এক ঘণ্টার মধ্যে ডায়রিয়া বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু এটা শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এটি আমরা কাউকেই খাওয়াতে রেফার করি না। ‘ন্যাচারালি কিওর’ হওয়ার পক্ষেই আমরা। তাই পানি শূণ্যতাকে দূর করতে সবাইকে স্যালাইন খাওয়ার পরামর্শ দেই আমরা। খুব অসুস্থ হলে আমাদের হাসপাতালে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়।
শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘শীতে বরাবরই ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট ও ঠান্ডা জনিত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এটা এবারও হয়েছে। তবে একটা বিষয়ে এখন পর্যন্ত স্বস্তির যে, গুরুতর ডায়রিয়া রোগী নেই। এবারের ডায়রিয়া রোগী ঢাকায়ও কিছুটা কম এখন পর্যন্ত। তবে ঢাকার আশাপাশের রোগীর সংখ্যা অনেক।’
তিনি বলেন, ‘শীত সিজনে ডায়রিয়ার জীবাণু বৃদ্ধি পায়। তাদের সংক্রমণও বৃদ্ধি পায় এই সময়টাতে। তাই সবাইকে শীত মৌসুমে সাবধানে থাকার পরামর্শ আমরা সব সময় দিয়ে আসি। এই সময়ে শুধু শিশুরাই নয় সবাই ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে থাকেন। তাই খাবার পানি ও বাইরের খাবার খাওয়ার সময় সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।