বিরল জেনেটিক রোগে আক্রান্ত ২ বছরের হাওইয়াংকে বাঁচিয়ে রাখতে চায় তার বাবা।কিন্তু ছোট এই শিশুটির চিকিৎসার জন্য যে ওষুধটির প্রয়োজন তা চীনে নেই।এছারাও করোনা মহামারির কারণে দেশের সী’মান্ত বন্ধ থাকায় বিদেশ থেকে আনাও সম্ভব নয়। হাওইয়াংকে বাঁচাতে মরিয়া শু উই
তাই নিজেই সেই ওষুধ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন। বাড়ির মধ্যেই চালু করেছেন নিজের গবেষণাগার। বার্তা সংস্থা এএফপিকে দে’ওয়া সাক্ষাৎকারে শু বলেন, ‘এটা হবে কি হবে না তা ভাবার মতো সময় আমার ছিল না। এটা করতে হবে ব্যস,
এতোটুকু ভেবেছি।’ হাওইয়াংয়ের মেনকেস সিনড্রোমে আক্রান্ত। এটি একটি জেনেটিক রোগ, যা মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কপারকে প্রভাবিত করে। এই রোগটি নিরাময় অযোগ্য। এর উপসর্গগুলো কিছুটা
কমাতে সাহায্য করে একটি ওষুধ। আর এই ওষুধটি চীনে পাওয়া যায় না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে, বি’দেশে গিয়ে ছেলের চিকিৎসা করাতেন শু। কিন্তু করোনা মহামারি শুরুর পর নিজেদের সীমান্ত বন্ধ করে দেয় চীন। তাই বিদেশে
যাওয়া কিংবা বিদেশ থেকে ওষুধ আনানো অসম্ভব হয়ে পড়ে শু এর জন্য। শুয়ের পড়াশোনার দৌঁড় হাইস্কুল পর্যন্ত। কিন্তু ছেলের বিরল রোগের বিষয়টি জানার পর তিনি নিজেই ফার্মাসিউটিক্যালস নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। কিন্তু পরিবারের সদস্য এবং বন্ধুরা শুয়ের এই কাজের বিরোধী ছিল। শু বলেন, ‘আমরা
বন্ধু এবং পরিবার এর বিরুদ্ধে ছিল। তারা বলেছিল এটা অসম্ভব।’ অনলাইনে মেনকেস সিনড্রোম নিয়ে যেসব লেখা পাওয়া যায় তার অধিকাংশই ইংরেজিতে। এগু’লো বুঝতে অনুবাদ সফটওয়্যারের আশ্রয় নিতে হয়েছে শুকে। কিছুটা জানাশোনার পর বাবার জিমনেশিয়ামে গবেষণাগার
খুললেন তিনি। লক্ষণ উপশমে কপার হিস্টাডিন সাহায্য করতে পারে জানার পর,শু হিস্টিডিন, সোডিয়াম হা’ইড্রোক্সাইড এবং পানির সাথে কপার ক্লোরাইড ডাইহাইড্রেট মিশ্রিত করতে সরঞ্জাম স্থাপন করেন। এখন হাওয়ংকে প্রতিদিনের
ঘরোয়া ওষুধের ডোজ দেন শু। তার তৈরি ওষুধ শিশুটির দেহে কপার সরবারহ করছে। অপেশাদার এই রসায়নবিদ দাবি ক’রেছেন,চিকিৎসা শুরুর দুই সপ্তাহ পরে রক্তের কয়েকটি পরীক্ষা করা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে রক্তের কপারের
মাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে। রেয়ার ডিজিজেস নামের একটি সংস্থার মতে, মেয়ে শিশুদের তুলনায় ছেলেদের মধ্যে মেনকেস সিনড্রোম বেশি দেখা। বিশ্বের প্রায় ১ লাখ শিশুর মধ্যে একজন এই রোগ নিয়ে জন্মায়। এই রোগের ওষুধ উৎপাদনে ফার্মাসিউটিক্যাল
কোম্পানিগুলোর আগ্রহ সামান্যই। কারণ যে চিকিৎসার ‘বাণিজ্যিক মূল্য নেই এবং এর ব্যবহারকারী গোষ্ঠী ছোট’ সেই ওষুধ উৎপাদন করতে চায় না তারা। শু এর ছেলের চিকিৎসা এবং গবেষণার খবরে ইতোমধ্যে জিন থেরাপি নিয়ে
কাজ করায় আগ্রহ প্রকাশ করেছে ভেক্টোর বিল্ডার নামের একটি আন্তর্জাতিক বা’য়োটেক গবেষণাগার। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ব্রুস লাহন মেনকেস সিনড্রোমকে ‘বিরল রোগের মধ্যে
একটি বিরল রোগ’ বলে বর্ণনা করেছেন। শুয়ের পরিবার সম্পর্কে জানার পর তারা এটা নিয়ে গবেষণায় অনুপ্রাণিত হয়েছেন। এই সংক্রান্ত ওষুধের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল এবং প্রাণিদের উপর পরীক্ষা আগামী কয়েক মাসের মধ্যে শুরুর পরিকল্পনা করা হয়েছে।