টাঙ্গাইলের ভুঞাপুরে শিশু সাজিম (৬) এবং তার ভাই দেড় বছরের সানির মৃত্যু সিলিং ফ্যান ছিঁড়ে হয়নি; মায়ের হাতে তারা খুন হয়েছে। রোববার বিকালে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, দুই
ছেলেকে হত্যা করে চলন্ত ফ্যানের মধ্যে মাথা দিয়ে তাদের মা আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। এর আগে দুপুর ১২টার দিকে ভূঞাপুর উপজেলার নিকরাইল ইউনিয়নের পুনর্বাসন এলাকা থেকে ২ জন শিশুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। গুরুতর আহত অবস্থায় শিশু দুটির মা সাদিয়া বেগমকে
টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রথমে পরিবারের সদস্যসহ স্থানীয়রা ধারণা করেছিলেন, ঘরের ভেতর ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় চলন্ত ফ্যানের পাখা তাদের ওপর খসে পড়ে। এতে ওই দুই শিশুর মৃত্যু হয় ও তাদের মা আহত হন। নিহত ওই দুই শিশু উপজেলা নিকরাইল ইউনিয়নের এক নম্বর পুর্নবাসন
এলাকার ইউসুফ মিয়ার ছেলে। স্থানীয়রা জানান, সাদিয়ার তিন নম্বর স্বামী ইউসুফ মিয়া এবং সাদিয়া ইউসুফের দ্বিতীয় স্ত্রী। নিহতের নানি সূর্য বেগম জানান, তার মেয়ের জামাই ইউসুফ তাদের এখানেই থেকে মাছ শিকার করে সংসার চালান। রোববার ভোরে তিনি মাছ
ধরার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। অনেক বেলা হলেও তার মেয়ে এবং নাতিদের কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে ডাকাডাকি করতে থাকেন। পরে তিনি তার মেয়ের জামাইকে ফোন করে বিষয়টি জানান। ইউসুফ এসে টিনের বেড়া কেটে ঘরে ঢুকে দুই নাতির লাশ এবং তার মেয়েকে
পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার শুরু করেন। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় সাদিয়াকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসা কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ জানান, মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত সাদিয়াকে দুপুরে হাসপাতালে আনা
হয়। মাথায় কয়েকটি সেলাই দেওয়ার পর তাকে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার জানান, সাদিয়া বেগম দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক কলহের জেরে ভুগছিলেন। সাদিয়ার ধারণা ছিল, ভাই এবং ভাইয়ের স্ত্রী তার দুই ছেলেকে হত্যা করতে পারে। এই
কারণে তিনি নিজেই ভোরে দুই ছেলেকে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করে। এরপর চলন্ত ফ্যানের মধ্যে মাথা দিয়ে আত্মহ’ত্যার চেষ্টা করেন সাদিয়া। এই সময় ফ্যানের দুটি পাখা ভেঙে নিচে পড়ে যায়। তিনি আরও জানান, বর্তমানে সাদিয়া
টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে পুলিশি হেফাজতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সাদিয়া দুই ছেলেকে হ’ত্যার কথা স্বীকার করেছেন। ভুঞাপুর থানার ওসি মো. ফরিদুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, পারিবারিক হতাশা থেকে শিশু দুটিকে খুন করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন গৃহবধূ সাদিয়া বেগম।