বিজয়ের বাংলা: মেয়ের প্রতিটি পরীক্ষায় আমি ব্যাগে করে লোহা, হাতুড়ি, করাত এসব নিয়ে যেতাম। যেন সুরাইয়ার জন্য তার সুবিধামতো একটা আসন তৈরি করে দিতে পারি। তারপর সে পা দিয়েই সব পরীক্ষা দিত। ঢাকা পোস্টের সঙ্গে আলাপকালে এমনটা জানান সুরাইয়ার বাবা ছফির উদ্দিন।
শেরপুর সদর উপজেলার আন্ধারিয়া সূতির পাড় দাখিল মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাকালীন সুপার ছিলেন সুরাইয়ার বাবা ছফির উদ্দিন। বর্তমানে তিনি চরপক্ষিমারী বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিউর রহমান মডেল স্কুলে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত।
আর সুরাইয়া স্থানীয় আন্ধারিয়া সূতিরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ২০১২ সালে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা (পিইসি), ২০১৫ সালে আন্ধারিয়া উচ্চবিদ্যালয় থেকে জেএসসি, ২০১৮ সালে একই স্কুল থেকে এসএসসি এবং ২০২০ সালে শেরপুর মডেল গার্লস কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন।
ছবির উদ্দিন আরও বলেন, গত ২ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে আমার মেয়ে। সে পা দিয়ে লিখে পরীক্ষা শেষ করে। এ কারণে সে ইতিমধ্যে দেশ-বিদেশে ব্যাপক সুনাম কুড়িয়েছে। ছোটবেলায় তাকে নিয়ে আমরা চিন্তা করতাম। কিন্তু সুরাইয়া যখন প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় (পিইসি) ভালো ফল করল, তখন আমরা আশাবাদী হলাম। আমার মেয়ে প্রতিবন্ধী, এটা কোনো বিষয় না। কারণ তার রয়েছে অদম্য ইচ্ছাশক্তি।
সুরাইয়ার মা মোর্শেদা বেগম আবেগাপ্লুত হয়ে ঢাকা পোস্টকে বলেন, তিন বছর বয়সে সুরাইয়া বসা শুরু করে। তখন তার শারীরিক প্রতিবন্ধকতা বাড়তে থাকে। এরপর ২০০৭ সালে তাকে আমরা বাড়ির কাছের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করাই। স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর সুরাইয়া লেখাপড়ায় মনোযোগী হয়। সব সময় বলত, ‘মা আমি একদিন অনেক বড় হব। আমার হাত অচল হইছে তো কী হইছে। পা দিয়ে আমি সব জয় করব।’