বিজয়ের বাংলা: জেলেদের জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে রুপালি ইলিশ। চট্টগ্রামে নগরীর বৃহত্তম মাছের আড়ত ‘ফিশারি ঘাট’সহ বিভন্ন ঘাট ও জেলার পাঁচ উপজেলার একাধিক ঘাট এখন ইলিশে সয়লাব। রাসমনি ঘাট, আনন্দবাজার ঘাট, উত্তর কাট্টলি, দক্ষিণ কাট্টলি, আকমল আলী ঘাটে শুধু ইলিশ আর ইলিশ। জেলার বাঁশখালী, মিরসরাই, আনোয়ারা, সন্দ্বীপ ও সীতাকুণ্ডের উপকূল এলাকায়ও প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। এত ইলিশ ধরা পড়ার পরও খুচরা বাজারে দাম কমছে না। এদিকে বরিশালে হঠাৎ করে ইলিশ ধরা কমে গেছে। যদিও দু’দিন আগে জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ে। ইলিশ শিকার কমে যাওয়ায় বরিশালে দামও বাড়তির দিকে।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, বঙ্গোপসাগরে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ায় জেলেদের চোখে-মুখে হাসির ঝিলিক। ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের ইলিশ কেন্দ্রিক অর্থনীতি চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার ইলিশ কেনাবেচা হচ্ছে। ডিম ছাড়ার মৌসুমে ইলিশ ও অন্যান্য সময় জাটকা শিকারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং প্রশাসনের নজরদারির কারণে চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকায় দিন দিন ইলিশ বাড়ছে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। চলতি অর্থবছরে শুধু ইলিশ থেকে ৫০০ কোটি টাকারও বেশি আয় হবে বলে তারা জানান।
প্রচুর ইলিশ ধরা পড়লেও বাজারে কিন্তু দাম কমছে না। নগরীর ফিশারিঘাট ও কাট্টলি এলাকার সমুদ্র তীর এবং আনন্দবাজার এলাকায় পাইকারি দরে এক কেজি বা তার বেশি ওজনের প্রতি মণ ইলিশ ২০ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রামের প্রতি মণ ইলিশ ১৮ হাজার, ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রামের ইলিশ প্রতি মণ ১৪ হাজার টাকায় এবং এর চেয়ে ছোট ইলিশ প্রতি মণ ১২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু এসব ইলিশ খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে আরও বেশি দামে। জেলা মৎস্য অফিসের তথ্য মতে, গত অর্থবছরে সরকারি হিসাবে ইলিশ ধরা পড়েছিল ৬ হাজার ৮শ’ টন, যা টাকার অঙ্কে দাঁড়ায় প্রায় ২৬৮ কোটি টাকার বেশি। অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছরে ইলিশের আহরণ তুলনামূলক বেড়েছে। এ বছর টাকার অঙ্কে ইলিশের মূল্য ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
সরেজমিন দেখা যায়, সাগর থেকে ইলিশভর্তি সারি সারি ট্রলার ঘাটে ভিড়েছে। ওইসব ট্রলার থেকে ইলিশ নামানো হচ্ছে। কেউ ইলিশ মাছের ঝুড়ি টানছেন, কেউ প্যাকেট করছেন, আবার কেউ সেই প্যাকেট দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাতে তুলে দিচ্ছেন ট্রাকে। অন্যদিকে খুচরা মাছবাজার ঘুরে দেখা গেছে পর্যাপ্ত ইলিশের সরবরাহ। অলিগলি পাড়া-মহল্লায়ও ভোর থেকে রাত পর্যন্ত চলছে ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতাদের ইলিশ বিক্রি।
বরিশাল ব্যুরো জানায়, দু’দিন আগেও জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ে। কিন্তু এখন চিত্র ভিন্ন। হঠাৎ করে ইলিশ শিকার কমে গেছে। গত এক সপ্তাহ ধরে বরিশাল মোকামে প্রতিদিন গড়ে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার মণ ইলিশ এলেও এখন আসছে মাত্র ১ থেকে দেড় হাজার মণ। এর প্রভাব দামেও পড়েছে। দুই দিনের ব্যবধানে প্রতি মণ বড় সাইজের ইলিশের দাম ১০ হাজার টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।
বরিশাল জেলা মৎস্য অফিসার (হিলসা) বিমল চন্দ্র দাস বলেন, ‘পূর্ণিমার জো কেটে যাওয়ায় এখন তেমন একটা মাছ পড়ছে না। অমাবশ্যা এলে আবার ইলিশ ধরা পড়বে। দু’দিন আগেও ইলিশের দাম কম ছিল। কিন্তু সরবরাহ অপেক্ষা চাহিদা বেশি হওয়ায় এখন ইলিশের দাম বেড়ে গেছে।’ সরেজমিন শুক্রবার নগরীর পোর্টরোড ইলিশ মোকামে দেখা যায়, এক কেজি সাইজের ইলিশ পাইকারি প্রতি মণ ৩২ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে, যা আগে বিক্রি হয়েছে ২০ থেকে ২২ হাজার টাকায়। ৫শ’ থেকে ৮শ’ গ্রামের প্রতি মণ ২৮ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে, যা আগে বিক্রি হয়েছে ১৮ হাজার টাকায়। প্রতি মণ জাটকা (৩শ’ থেকে ৪শ’ গ্রাম পর্যন্ত) ১৬ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে; যা আগে বিক্রি হয়েছে ১০ হাজার টাকা দরে।
পোর্ট রোডের আড়তদার তালুকদার এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী কবির হোসেন জানান, মোকামে সাগরের ইলিশের আমদানি কমে গেছে। তাই দাম বেড়ে গেছে।