মায়ের বাধ্য সন্তান। আর তার দারুণ উদাহরণ যেন হাঁসের ছানারা। মা হাঁসের পেছনে সারি বেঁধে সাঁতার কাটা হাঁসছানাদের জুড়ি মেলা ভার। তবে কেন জানেন কি? এর পেছনে রয়েছে দারুণ এক বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা। আসুন তবে জেনে নেয়া যাক এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা সম্পর্কে-
বিজ্ঞানীরা হাঁসছানাদের এই দারুণ নিয়মানুবর্তিতার কারণ গবেষণা করে বের করেছেন। তারা বলছেন, মা হাঁস যখন পানিতে সাঁতার কেটে সামনে এগিয়ে যায়, তখন যে ঢেউ সৃষ্টি হয়, সেই ঢেউয়ে ভেসে মাকে অনুসরণ করা হাঁসেরছানাদের জন্য সহজ হয়ে যায়। মা হাঁসের
সাঁতারের সময় সৃষ্ট ঢেউ পেছনে থাকা ছানাগুলোকে সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। এতে তাদের শক্তি বাঁচে প্রচুর। গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটির জার্নাল অফ ফ্লুইড মেকানিকস্। এর আগে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে সাঁতারে হাঁসছানাদের
অনেক বেশি শক্তি খরচ করতে হয়। সেসব গবেষণায় এটাও ধারণা করা হচ্ছিল যে মা হাঁসের পেছনে থাকলে ছানাদের জন্য সাঁতার কাটা অনেক সহজ হয়ে যায়। তবে কীভাবে তারা শক্তিটা বাঁচায়, তা এতদিন অজানা ছিল। এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে কম্পিউটারে ঢেউয়ের কৃত্রিম
তরঙ্গ তৈরি করেন নেভাল আর্কিটেক্ট ঝিমিং ইউয়ান। স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে ইউনিভার্সিটি অফ স্ট্র্যাথক্লাইডের এই গবেষক হিসাব করে দেখেছেন, মা হাঁসের ঠিক পেছনে থাকা ছানার জন্য সাঁতার কাটা সবচেয়ে সহজ হয়। একা একা সাঁতার কাটতে গেলে হাঁসছানাকে পানিতে
লাথি দিয়ে এগোতে হয়। এতে অনেকটা শক্তি খরচ হয়ে যায়। ফলে ছানার গতি কমে যায়, অনেকটা পেছনে টেনে ধরার মতো অবস্থা হয়। বিপরীতে মা হাঁসের পেছনে সাঁতার কাটলে পেছন থেকে টেনে ধরার বদলে উল্টো তাকে ধাক্কা দিয়ে পানি সামনে এগিয়ে দেয়।
হাঁসছানারা লক্ষ্মী ভাইবোনদের মতো এই সুবিধাটা ভাগাভাগি করে ব্যবহার করে। সারি বেঁধে থাকা ছানারা সামনে এগিয়ে যেতে যেতে এই ঢেউ পেছনে থাকা পরের ছানার দিকে ঠেলে দেয়। ফলে পুরো ঝাঁকই তেমন শক্তি খরচ ছাড়া সাঁতরে সামনে এগিয়ে যেতে থাকে। আবার মায়ের পেছনে এই সারি বাঁধাতেও নিয়ম রক্ষা করে হাঁসছানারা। সবচেয়ে ছোট ছানাটিই থাকে মায়ের ঠিক পেছনে। নিয়ম ভেঙে কোনো কারণে সারি থেকে আলাদা হয়ে গেলে সাঁতার কাটা কঠিন হয়ে যায়।