বিজয়ের বাংলা ইসলামিক ডেস্ক:নামাজে দাঁড়ালে অনেক সময় এলোমেলো চিন্তা ভাবনা আসে,, মাঝে মধ্যে নামাজের রাকাত সংখ্যা ভুলে যাই। অনেকেই নামাজের মনোযোগ হীনতায় আক্রান্ত,, এক হাদীসে রাসূল সাঃ এটিকে শয়তানের ছিন্তাই বলেছেন।
🌺🌺নামাজে হৃদয়ের উপস্থিতি এবং একাগ্রতা অধিক গুরুত্বপূর্ণ, একাগ্রতা নামাজের প্রাণ,, রাসূল সাঃ বলেন এমন ভাবে আল্লাহর এবাদত করো যেন তুমি তাকে দেখতে পাচ্ছ,,আর যদি দেখতে না পাও তবে তিনি যেন তোমাকে দেখতে পাচ্ছে (বুখারী হাদিসঃ৫০,মুসলিমঃ৮)
🌺🌺মানুষের মন মস্তিষ্ককে ভালো কাজের থেকে সরিয়ে রাখতে এবং কুপ্রবৃত্তির দিকে ঠেলে দিতে শয়তান সদা তৎপর,,, আমরা আমরা যখন আরামদায়ক বিছানা ছেড়ে আল্লাহর এবাদতের ব্যস্ত থাকি শয়তানকে আশ্রয় না দিয়ে তখন শয়তান হতাশ হয়ে ফিরে যায় এবং পরে আবার আসে আবার ফিরে যায় ও আবার আসে, শয়তান যদি হতাশ হয়ে বারবার ফিরে আসে তাহলে সৃষ্টির সেরা জীব হয়ে আমাদের কেও শয়তান এর চক্রান্তে লিপ্ত না হয়ে আল্লাহর এবাদত এ সদা সতর্ক থাকতে হবে,,
🌺🌺নামাজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একথা কল্পনা করতে হবে আল্লাহ আমাকে দেখছেন,, নামাজের মধ্যে প্রত্যেক মুহুর্ত এই কথা মনে রাখা আল্লাহ আমাকে দেখছেন,,ভুলে গেলে মনে আনার চেষ্টা করুন তবুও অনুশীলন অব্যাহত রাখুন,,
🌺🌺রাসুল (সাঃ) বলেন যে সুন্দর ভাবে অযু করে অতঃপর মন এবং শরির একত্র করে (একাগ্রতার সাথে) দুই রাকাত নামায আদায় করে, (অন্য বর্ণনায় এসেছে যেই নামাজ এই ওয়াসওয়াসা)স্থান পায় না তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়,, (বুখারি হাদিসঃ১৯৩৪,নাসায়ি হাদিসঃ১৫১)অন্য বর্ণনায় আছে তার সমস্ত গোনাহ মাফ করে দেওয়া হয়,,
🌺🌺এবাদত এ মমনোযোগী হওয়ার কিছু উপায়,,👉বিশুদ্ধ উচ্চারণ পড়ার চেষ্টা:
এটা অন্তরের একাগ্রতা আরও দৃঢ় করে অন্তত সুরা ফাতিহা তাসবিহ গুলোর অর্থ বুঝে পড়া দরকার,, আল্লাহ বলেন স্পষ্ট ভাবে ধীরে ধীরে কোরআন তেলাওয়াত করো(সুরা মুজ্জামিলবঃ৪)
🌺🌺এ ব্যাপারে রাসুল সাঃ বলেছেন,,, আল্লাহ বলেন আমি নামাযকে আমার এবং আমার বান্দার মধ্যে দুই ভাগে ভাগ করেছি,,বান্দা আমার কাছে যা কামনা করবে তাই পাবে,,যখন আমার বান্দা বলে সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি সারা বিশ্বের মালিক, তখন আল্লাহ বলেন বান্দা আমার প্রশংসা করছে,, যখন বলে পরম
করুনাময় অসীম দয়াবান,, আল্লাহ বলেন বান্দা আমার গুনগান করল,,যখব বলে বিচার দিবস এর মালিক,, তখন আল্লাহ বলেন, বান্দা আমাকে যথাযথ মর্যাদা দান করেছেন,,যখন বলে আমরা কেবল আপবারই এবাদত করি এবং
আপনার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি,, তখন আল্লাহ বলেন এটি আমার ও আমার বান্দার মধ্যে আর আমার বান্দা যা চাইবে তাই পাবে,,যখন বলে আপনি আমাদের সরল পথ প্রদর্শন করুন তাদের পথ নয় যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে,,আল্লাহ তায়ালা তখন বলেন এটা আমার বান্দার জন্য আর বান্দা যা প্রার্থনা করবে তাই পাবে,, (মুসলিম হাদিসঃ৩৯৫,মিশকাত হাদিসঃ৮২৩)
🌺🌺নামাযে আল্লাহর প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন:
👉আল্লাহ তায়ালা তার বান্দার নির্দেশ দিয়েছেন,, তোমরা বিনিত ভালো আল্লাহর সম্মুখে দন্ডায়মান হও (সুরা বাকারাঃ২৩৮)
👉আবু কাতাদা রাঃ হতে বর্ণিত রাসুল সাঃ বলেছেন, নিকৃষ্টতম চোর হলো সেই ব্যাক্তি, যে নামাজ এই চুরি করে,,তিনি বললেন হে আল্লাহর রাসুল নামাজ এ কিভাবে চুরি করে? তিনি বললেন যে রুকু সেজদা পূর্ণভাবে আদায় করেনা,,(মুসনাদে আহমদ ৮৮৫)
🌺🌺এবাদত এই ভালো মনোযোগ আনতে নিচের বিষয় গুলো খেয়াল করিঃনামাজ এ আল্লাহর ভয়ঃ
প্রতিটি নামাযই হতে পারে জীবন এর শেষ নামায, রাসুল সাঃ এর কাছে জৈনক ব্যাক্তি সংক্ষিপ্ত উপদেশ কামনা করলেনতিনি বললেন যখন তুমি নামাজ এ দাড়াবে এমন ভাবে নামায আদায় করবে যেন এটিই তোমার জীবন এর শেষ নামায (মিশকাত:৫২২৬)
👉নামায এর মাধ্যমে কল্যাণ আশা করা:
আল্লাহ বলেন তোমরা ধৈর্য এবং সালাত এর মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর (সুরা বাকারা:৪৫)
রাসুল সাঃ বলেছেন:তোমাদের কেউ নামায এ দাড়ালে সে মুলত তার প্রভুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে,,তাই সে যেন দেখে কিভাবে সে কথোপকথন করছে,
👉নিজেকে গোনাহগার চিন্তা করাঃ
আল্লাহর সামনে দন্ডায়মান হওয়ার কথা ভেবে নিজের ভেতরে অনুসুচনা নিয়ে আসতে হবে, দন্ডায়মান অবস্থায় একজন অপরাধীর মত মস্তক অবন্ত রেখে দৃদৃষ্টিকে সিজদার স্থান এর দিকে রাখুন অবস্থায় জায়গায়, রাসুল সাঃ যখন দাড়াইতেন তিনি দৃষ্টিকে সেজদার দিকে রাখতেন,,🌺🌺
🌺🌺নিজেকে কিয়ামতের মাঠে উপস্থিত মনে করাঃ👉কিয়ামতের ময়দানে সেই ভয়াবহ অবস্থার কথা চিন্তা করে তার মধ্যে নিজেকে শুধু আল্লাহর রহমতে মুখাপেক্ষী ধারণা করে নিজের অসহায় অবস্থার কথা চিন্তা করি,, হাজার হাজার বছর উতপ্ত করা জাহান্নামের আগুন প্রস্তুত হয়ে আছে,,সব হিসাব আল্লাহ নিবেন,,
👉আমার মনের মধ্যে আল্লাহকে দেখার মত অনুভূতি সৃষ্টি করতে না পারলে এমন অনুভূতি সৃষ্টি করতে হবে যে আল্লাহ তো অবশ্যই আমাকে দেখছেন,, রাসূল সাল্লাহু সালাম এর ভাষায় আল্লাহর এবাদত করবে এমন ভাবে যেন তুমি তাঁকে দেখছ আর যদি তুমি তাকে দেখতে না পাও তবে তিনি তো অবশ্যই তোমাকে,, দেখছেন
🌺🌺এই নামাজে আমার জীবনের শেষ নামাজ,
👉দুনিয়া থেকে বিদায় গ্রহণকারীর নামাজের মত নামাজ পড়ো,, পরের ওয়াক্ত আসার আগেই যদি আমার মৃত্যু হয়,, দুনিয়ার সবকিছু ছিন্ন করে একটু পরে আমাকে চলে যেতে হবে,, মহান মালিকের সর্বশ্রেষ্ঠ এবাদত এই নামায পড়ার
সুযোগ আর নাও আসতে পারে,,মৃত্যু পথের যাত্রীর মতো দুনিয়া থেকে চির বিদায় এর মনোভাব নিয়ে দুনি’য়ায় সব কিছু থেকে মুখ ফিরিয়ে একমাত্র মহান মনিবের কাছে শেষ প্রার্থনা জানাবার আবেগ অনুভুতি নিয়ে নামায পড়লে নামায এ মনোযোগি ধরে রাখা সম্ভব হবে,,
🌺🌺মেরাজ এর অনুভুতি নিয়ে নামায পড়াঃ
👉রাসুল সাঃবলেন মুমিনদের মেরাজ হলো নামায,,আল্লাহ তায়ালা তার প্রিয়তম হাবিবকে ডেকে নিলেন উর্ধ্বাকাশে,, তার পরম সানিধ্যে,,দুইজন এর চরম নৈকট্য সংঘাত হলো মিরাজ,,রাসুল সাঃ এর প্রতি আল্লাহর ভালোবাসা এক অনুপম প্রকাশ,, মিরাজ এর রাতেই
আল্লাহ তার হাবিবের উম্মতদের জন্যও মেরাজ এর ব্যাবস্থা করলেন,, তিনি মেরাজ এর রাতে উম্মতদের হাদিয়া দিলেন দৈনিক বান্দা পাঁচবার আল্লাহর চরম নৈকট্যের অঅনুভুতি নিয়ে তার সাথে গোপন এ আলাপ করবে,,আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ এবং আশা নিয়ে এবং রাসুল সাঃ এর মিরাজের অনুরুপ নৈকট্যের অঅনুভুতি নিয়ে নামায পড়তে পারলে আমরা পাব মহান মবিবের সাথে মিরাজ এর পরম তৃপ্তি,,
👉🌺🌺উপরের বিষয় গুলো অনুসরণ করলে নামায এ মনযোগ তৈরি হবে ,হাদিস এ রাসুল সাঃ বলেছেন যে ব্যাক্তি নামায এর সময় হলে সুন্দরভাবে রুকু সেজদার মাধ্যমে নামায আদায় করে,, তার এ নামায আগের গুনাহ এর কাফফারা হয়ে যায়,, যতক্ষণ পর্যন্ত সে কোন কবিরা গোনাহ তে লিপ্ত না হয় ,, আর এ সুযোগ তার সারা জীবন এর জন্য, (মুসলিম হাদিস:২২৮,,মিশকাত হাদিসঃ২৮৬)
লেখিকা:মেহেনাজ ফারহানা/কুষ্টিয়া