তুরস্ক এবং সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বাড়ছেই। ইতোমধ্যেই ২ হাজার ৫০০ ছাড়িয়েছে মৃতের সংখ্যা।এখনও ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়ে আছেন বহু মানুষ।নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
বিবিসি বলছে, তুরস্কে ১ হাজার ৯০০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গেছেন। তুর্কি দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সবশেষ তথ্যমতে, দেশটিতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১
হাজার ৪৯৮ জনে পৌঁছেছে। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত সব এলাকাতেই উদ্ধারকারী দল পৌঁছে গেছে। ভূমিকম্পে তুরস্কে ২ হাজার ৮৩০টি ভবন ধসে পড়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে সিরিয়ায় মৃত ৭৮৩ জনে দাঁড়িয়েছ বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে জানানো হয়। সবমিলিয়ে দুই দেশে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২ হাজার ২৮১। আরও বিবিসির হিসেব অনুযায়ী মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে আড়াই হাজার।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা জানিয়েছে, সোমবারের (৬ ফেব্রুয়ারি) ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের কারণে তুরস্কে আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সব স্কুল বন্ধ ঘোষণা করেছে দেশটির শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
প্রথম ভূমিকম্পটি হয়েছে ভোর ৪ টা ১৭ মিনিটে এবং সেটির মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৮; দ্বিতীয়টি ঘটে তার ১৫ মিনিট পর। সেটি মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৭। এর প্রায় ১৩ ঘন্টার ৭ দশমিক ৫ মাত্রার আরও একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে।
ভয়াবহ এই ভূমিকম্পের বর্ণনা দিয়েছেন বেঁচে ফেরা এক তুর্কি তরুণী। তার নাম ওজগুল কনাকচি। তুরস্কের মালত্য শহরের বাসিন্দা ২৫ বছরের ওজগুল বলেন, চোখের সামনে ভবনের জানালাগুলো সশব্দে চূর্ণবিচূর্ণ হতে দেখেছি।
তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলে সোমবার স্মরণকালের অন্যতম ভয়াবহ ভূমিকম্পে প্রাণহানি ১০ হাজারে গিয়ে ঠেকতে পারে বলে আভাস দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস।
সংস্থাটির অনুমান অনুযায়ী, ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ১ হাজার থেকে ১০ হাজার হওয়ার শঙ্কা ৪৭ শতাংশ। ১০০ থেকে ১ হাজার হওয়ার শঙ্কা ২৭ শতাংশ। অন্যদিকে কম্পনে প্রাণহানি ১০ হাজার থেকে ১ লাখ হওয়ার শঙ্কা ২০ শতাংশ।
ইউএসজিএস বলেছে, ভূমিকম্পে তুরস্কের ১০০ কোটি থেকে ১ হাজার কোটি ডলারের ক্ষতি হতে পারে, যা দেশটির মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২ শতাংশের সমান।
সীমান্তের উভয় পাশের একাধিক শহরে বিধ্বস্ত ভবনগুলোর ধ্বংসস্তূপের নীচে বেঁচে থাকা ব্যক্তিদের সন্ধানে নেমেছেন স্থানীয় উদ্ধারকর্মী ও বাসিন্দারা। তুরস্কের দিকে এই অঞ্চলে বেশ কয়েকটি বড় শহর রয়েছে। এসব এলাকায় লক্ষাধিক সিরীয় শরণার্থীর আবাসস্থল।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান টুইটারে বলেছেন, ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী দল পাঠানো হয়েছে। আশা করছি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কম ক্ষতিসহ এই দুর্যোগটি একসাথে কাটিয়ে উঠব।
তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুলেমান সোয়লু ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলোতে প্রবেশ না করার জন্য বাসিন্দাদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ধসে পড়া ভবনের নিচে আটকে থাকা মানুষদের উদ্ধার করা আমাদের প্রথম কাজ।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতত্ত্ব জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস এক বিবৃতি অনুযায়ী, পর পর দু’টি ভূমিকম্প হয়েছে তুরস্কে। প্রথমটি হয়েছে ভোর ৪ টা ১৭ মিনিটে এবং সেটির মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৮; দ্বিতীয়টি ঘটে তার ১৫ মিনিট পর। সেটি মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৭।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ খারমানমারাসের গাজিয়ানতেপ শহরের কাছে ভূপৃষ্ঠের ১৭ দশমিক ৯ কিলোমিটার গভীরে ছিল ভূমিকম্প দু’টির উৎপত্তিস্থল। তুরস্ক ছাড়াও সিরিয়া, লেবানন ও সাইপ্রাসে কম্পন অনুভূত হয়েছে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে এএফপি।
পার্শ্ববর্তী দেশ সিরিয়ার সীমান্ত থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত গাজিয়ানতেপ তুরস্কের অন্যতম শিল্পোৎপাদন কেন্দ্র নামে পরিচিত। এই শহরটি ও তার আশপাশের এলাকায় বেশ কিছু শিল্প কারখানা গড়ে ওঠায় তুরস্কের অন্যতম জনবসতিপূর্ণ শহর এই গাজিয়ানতেপ। সিরিয়ার সীমান্তবর্তী হওয়ায় গাজিয়ানতেপে অনেক সিরীয় শরণার্থীও আছেন।