1. atikurrahman0.ar@gmail.com : বিজয়ের বাংলা : বিজয়ের বাংলা
  2. Mijankhan298@gmail.com : Bijoyerbangla News : Bijoyerbangla News
  3. rabbimollik2002@gmail.com : Bijoyerbangla News : Bijoyerbangla News
  4. msthoney406@gmail.com : বিজয়ের বাংলা : বিজয়ের বাংলা
  5. abur9060@gmail.com : বিজয়ের বাংলা : বিজয়ের বাংলা
আইনের বাস্তবায়ন না থাকায় স্বেচ্ছাচারী বাড়ির মালিকরা - ২৪ ঘন্টাই খবর

আইনের বাস্তবায়ন না থাকায় স্বেচ্ছাচারী বাড়ির মালিকরা

  • আপডেট করা হয়েছে: বুধবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
  • ২০৬ বার পঠিত

রাজধানীতে বছরের প্রথমে বাসা ভাড়া বৃদ্ধি করতে হবে এটা যেনো নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে! বেশির ভাগ এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাসা ভাড়া বৃদ্ধি করেছেন রাজধানীর বাড়ির মালিকরা। যদিও

এ বিষয়ে একটি আইন রয়েছে। কিন্তু এই ক্ষেত্রে কোনো কিছুই মানতে নারাজ বাড়ির মালিকরা। আইনের প্রয়োগ নেই বলে বাড়ির মালিকরা নিজেদের ইচ্ছে মতো বাসা ভাড়া বাড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ ভাড়াটিয়া পরিষদের।

গত কয়েকদিন ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানীতে একেক এলাকায় একেক ধরনের বাড়ি ভাড়া। কোথাও ভাড়া নির্দিষ্ট নেই। যে যেভাবে ইচ্ছে ভাড়া চাইছেন ভাড়াটিয়াদের কাছে। এ যেনো এক জিম্মি দশা।

রাজধানীর মোহম্মদপুরের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম। চাকরি করেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। দুই বেড ও একটি ড্রইং-ডাইনিংসহ একটি বাসায় ভাড়া থাকেন। তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা পাঁচজন। নতুন বছর শুরু হলেও বেতন বৃদ্ধি পায়নি এক টাকাও। কিন্তু বাড়ির মালিক ঠিকই বাসা ভাড়া বাড়িয়েছেন। কিন্তু কেনো বাসা ভাড়া বাড়িয়েছেন তা জানাতে পারেনি রফিকুল ইসলাম।

মিরপুরের বাসিন্দা আনোয়ারুল ইসলাম সোনালীনিউজকে বলেন, মেট্রোরেল উদ্বোধনের পরই বাসা ভাড়া বৃদ্ধির কথা জানান বাড়িওয়ালা। চার তলা বাড়ির প্রত্যেকটি ফ্ল্যাটের ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে। যেটা খুবই অসঙ্গতিপূর্ণ। অথচ একটি টাকাও আমাদের বেতন বৃদ্ধি পায়নি। খাবারের দাম বেশি। যাতায়াত খরচ বেশি। জীবন চালানো যেখানে কঠিন সেখানে এমন স্বৈরাচারী আচরণ মানা যায় না। এসব দেখার কেউ নাই।

উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের বাসিন্দা আমির উদ্দিন সোনালী নিউজকে বলেন, প্রতিটি বাড়ির প্রতিটি ফ্ল্যাটে এক হাজার টাকা করে বাড়িয়েছে বাড়ির মালিকরা। এই যে হাজার টাকা বাড়তি চাপ সেটা কিভাবে দিবো আমরা। প্রতিটি ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়ারা আলাদা চাপে পরেছে।

লালবাগ, কামরাঙ্গীরচর, যাত্রাবাড়ীসহ রাজধানীর বেশির ভাগ এলাকাতেই বাসা ভাড়া বাড়িয়েছে মালিকরা।

কামরাঙ্গীরের বাসিন্দা দিনমজুর পেয়ার আলী ও লালবাগের রিকশা চালক আলাউদ্দিন বলেন, আড়াই হাজার টাকায় একটি বাসায় থাকি। সেটা এখন তিন হাজার টাকা। একই রকম করে পাঁচশো টাকা বড়িয়েছে আলাউদ্দিনের টিনশেড বাসার মালিক।

এই বাড়তি টাকা কোথা থেকে জোগার করবেন তা নিয়ে প্রত্যেকেই চিন্তিত। সবার একই কথা বাসা ভাড়া বৃদ্ধির জন্য অবশ্যই সরকারের একটি নীতিমালা থাকা জরুরী। প্রতিটি বাড়ির ভাড়া বৃদ্ধি করা ও ভাড়া দেয়ার বিষয়ে একটি আইন রয়েছে। আইনটি কার্যকর না করায় এই সমস্যা তৈরি হয়েছে। কারা এই আইনটি কার্যকর করবে সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানেনা কেউ।

ভাড়াটিয়া অধিকার রক্ষা কমিটির সভাপতি বাহরানে সুলতান বাহার সোনালীনিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, করোনার মধ্যে মানুষ অনেক বিপদে ছিলো। সেই সময় সবচেয়ে বেশি বিপদে ছিলো মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো। এই পরিবারগুলো আবারও বিপদে পরতে যাচ্ছে। এই বৈশিক অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে বাসা ভাড়া বৃদ্ধি করেছে বাড়ি ওয়ালারা। প্রতিবছর আর কিছু হোক না হোক বাড়ি ভাড়া বাড়াতে ভুলেন না বাড়ির মালিকরা।

তিনি বলেন, বিদ্যুতের দাম বেশি, গ্যাসের দাম বেশি, নিত্যপণ্যের দাম বেশি। এই অবস্থায় হঠাৎ করে বাড়ি ভাড়া বাড়ানোয় বিপদে পরেছেন ভাড়াটিয়ারা। এমনিতেই মানুষ তার জীবন চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। তার সঙ্গে এই বাসা ভাড়া আরো বিপদ ডেকে এনেছে মানুষের জন্য। বাসা ভাড়া ও বাড়িওয়ালাদের লাগাম টানতে হবে সরকারের বিভিন্ন সংস্থাকে। বিশেষ করে সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব বাসা ভাড়া সঠিক রাখা। এমন হতে পারে এলাকা ভিত্তিক বাসা ভাড়া নির্ধারণ করে দিতে পারে সরকার।

বাসা ভাড়া নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব এখন পর্যন্ত কারো ওপর ন্যস্ত হয়নি। ১৯৯১ সালের ‘বাড়ী ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন-১৯৯১’ অনুযায়ী একজন নিয়ন্ত্রক বাড়ী ভাড়া নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকবেন। এই নিয়ন্ত্রক হবেন একজন সহকারী জজ। তিনি মূলত বাড়ী ভাড়া নিয়ন্ত্রণে কাজ করবেন। যদিও একজন সহকারী জজের কাজের পরিধির মধ্যে এই কাজটি পরে না। কিন্তু যখন আইন করা হয়েছে তখন এই আইনের মধ্যেই একজন সহকারী জজকে রাখা হয়েছে।

বাড়িভাড়া নিয়ে সংক্ষুব্ধ হলে যে কেউ ঢাকার সহকারী জজ আদালতগুলোতে প্রতিকারের জন্য মামলা করতে পারেন। বাড়িভাড়া সংক্রান্ত মামলার সংখ্যা কত, তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই কারও কাছে। তবে এ ধরনের মামলা কম হয় বলে জানান আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। তিনি বলেন, বাড়ির মালিকের সঙ্গে মামলা করে সেই বাড়িতে টিকে থাকা কষ্টকর, তাই ভাড়াটেরা মামলা করেন না বললেই চলে।

বাস্তবায়নের ক্ষমতা না থাকলেও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন রাজধানীতে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় করে। এই আদায়ের সময় তারা প্রতিটি ফ্ল্যাটের বর্গফুট অনুযায়ী ভাড়া নির্ধারণ করে দেয়। প্রধান সড়ক ও গলির পাশের বাসাগুলোর ভাড়া আলাদা করে দেয়া হয়। সেই হিসেবে হোল্ডিং ট্যাক্সও নেয়া হয়।

প্রতিটি এলাকায় ট্যাক্স অনুযায়ী বাসা ভাড়া নির্ধারণ থাকলেও তার দ্বিগুন বাসা ভাড়া আদায় করে বাড়ি ওয়ালারা। ট্যাক্স অনুযায়ী যে বাসা ভাড়া হওয়া উচিত ১৫ হাজার বা তার কম সেই বাসা ভাড়া আদায় করা হয় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিরপুরের শেওড়াপাড়া এলাকায় প্রতি বর্গফুটের ভাড়া ১১ টাকা নির্ধারণ করেছে উত্তর সিটি করপোরেশন। সেই অনুযায়ী প্রতি হাজার বর্গফুটের বাসার ভাড়া আসে ১১ হাজার টাকা। কিন্তু এই বাসার ভাড়া আদায় করা হয় ২২ হাজার টাকা। এর সঙ্গে আলাদা ভাবে যুক্ত করা হয় পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের বিল। ২২ হাজার টাকা ফ্ল্যাট ভাড়া গিয়ে দাড়ায় ২৬ হাজার টাকার কাছাকাছি।

ওয়ারী এলাকায় বাসা ভাড়া হোল্ডিং ট্যাক্স অনুযায়ী এক বর্গফুট ১৪ টাকা। সেই অনুযায়ী এক হাজার বর্গফুটের একটি বাসা ভাড়া আসে ১৪ হাজার টাকা। যাদিও এই নিয়ম কোনো ভাবেই মানা হয় না।

এ বিষয়ে উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা সোনালীনিউজকে বলেন, বাসা ভাড়া নির্ধারণ করে দেয়া আমাদের দায়িত্ব না। কিন্তু আমরা হোল্ডিং ট্যাক্স তুলতে গেলে ভাড়া নির্ধারণ করতে হয়। সেই ভাড়ার ওপর বেইজ করেই হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় করা হয়। সরকার আমাদের ভাড়া নিয়ন্ত্রণের কোনো দায়িত্ব দেয়নি। কে বা কারা এই আইন বাস্তবায়ন করবে সেটাও বলা হয়নি আইনে।

দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তথ্য কর্মকর্তা আবু নাসের বলেন, বাসা ভাড়া আইন বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব আমাদের না। কারা এটা করবে তা আমাদের জানা নেই।

নগর পরিকল্পনাবীদ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম সোনালীনিউজ বলেন, এটা তো দীর্ঘ দিনের সমস্যা। আইন অনেক আগের। এই আইনটিই ভাড়াটিয়াদের জন্য কার্যকর। কিন্তু কে এটার বাস্তবায়ন করবে সেটাই যানা নেই। আদালতে গিয়ে মামলা করলে পরে একজন সহকারী জজ সমস্যার সমাধান করবেন। এভাবে হবে না। একটা নির্দিষ্ট কমিটি গঠন করতে পারলেই ভারাটিয়াদের স্বার্থ রক্ষা করা যাবে।

নিম্ন আদালতের আইনজীবী খন্দকার তানভির আহমেদ বলেন, এই আইনের আদলে ভাড়াটিয়াদের স্বার্থ রক্ষা করা খুব সহজ। আইনের কিছু ব্যত্যয় আছে। সেটা চাইলে আরো ঠিক করা সহজ। কিন্তু একজন সহকারী জজ যে পরিমান ব্যস্ত থাকেন, তার ওপর এই কাজটি কতটা করতে পারবেন তা নিয়ে সন্দেহ আছে। তবে অভিযোগ আসলে অবশ্যই আদালত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আমি মনে করি।

নিউজটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর পড়ুন
© All rights reserved 2022
Site Developed By Bijoyerbangla.com