অর্পিতার ৩১টি জীবন বিমার নমিনি পার্থ, বিশেষ আদালতে এই দাবি পেশ করে ইডির আইনজীবি তুলে ধরতে চাইলেন তাদের সর্ম্পকের কথা। তদন্তের স্বার্থে তাদের ফের ইডি হেফাজতে
দেওয়া হোক। ইডির এই আবেদনে মান্যতা দিয়ে এখনই ছাড় পাচ্ছেন না তারা। বুধবার আদালত সাফ জানিয়ে দিলো, শিক্ষা দফতরের নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তের স্বার্থে আগামী ৫ আগস্ট
পর্যন্ত ইডির হেফাজতে থাকবেন বরখাস্ত মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও তার ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। এদিন দু’পক্ষের আইনজীবীদের সওয়াল জবাবের পর ব্যাংকশাল আদালতে ইডির বিশেষ
কোর্ট এই নির্দেশ দিয়েছে। ইডির বিশেষ আদলতে পেশ করার আগে সিজিও কমপ্লেক্স থেকে ফের জোকার ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় পার্থ ও অর্পিতাকে। এদিন সাংবাদিকদের সামনে মুখ খোলেননি পার্থ। কিছুটা বিধ্বস্ত দেখা
যাচ্ছিল তাকে। মঙ্গলবার তার দিকে জুতো ছুড়ে মারার ঘটনার পর বাড়তি নিরাপত্তা ছিল হাসপাতাল চত্ত্বরে। তবে আদালতে যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের কাছে মুখ খোলেন অর্পিতা। টাকা
কার? কে রেখেছিল? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে অর্পিতা বলেন, ‘সময়ে জানতে পারবেন।’দু’জনের স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর ব্যাংকশাল আদালতের দিকে রওনা
দেন ইডির কর্মকর্তারা। এদিকে জানা গেছে, আদালতের নির্দেশে পার্থ-অর্পিতার ৪৮ ঘণ্টা পর পর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ইডির জেরায় ভেঙে পড়ে, নার্ভাস ব্রেকডাউন হয়েছিল অর্পিতার। তাই কান্নায় ভেঙে
পড়ে অজ্ঞানের মতো হয়ে গেছিলেন। অন্যদিকে, পার্থ মানসিকভাবে শক্ত আছেন। দুপুর ৩টা নাগাদ ব্যাংকশাল আদালতে নিয়ে আসা হয় পার্থ ও অর্পিতাকে। সূত্রের খবর, বুধবারও
আদালতে ঢোকার মুখে পার্থকে লক্ষ্য করে উড়ে আসে বিরূপ মন্তব্য। পার্থ ও অর্পিতাকে বিকাল সাড়ে চারটা নাগাদ কোর্ট রুম থেকে বের করে এজলাসে নিয়ে
যাওয়া হয়। বুধবার বিচারক জীবন কুমার সাধুর এজলাসে হওয়া শুনানিতে ইডির আইনজীবী এসভি রাজু বলেন, ইতোমধ্যে আরও একটা ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয়েছে মোট ২৭ কোটি রুপি, প্রচুর গয়না ও
সোনার বার। ২ আগস্ট অর্পিতার নামে থাকা একটি নেল আর্টের দোকান সিল করা হয়েছে। এখানে পার্থ ও অর্পিতার ৫০ শতাংশ করে শেয়ার রয়েছে। তাদের নামে যৌথ সম্পত্তিরও হদিস
মিলেছে। দু’জনের মধ্যে ‘ঘনিষ্ঠ’ যোগাযোগ না থাকলে এমনটা হওয়া সম্ভব নয়। তাদের আরও একটি যৌথ সম্পত্তির হদিস মিলেছে। ২০১২ সালে তাদের যৌথ মালিকানায় ‘এপিএ ইউটিলিটি সার্ভিসেস’ তৈরি হয়েছিল। ওই বছর নভেম্বর
মাসে এই বিষয়ে চুক্তি হয়েছিল। অনেকে আবার এই ‘এপিএ ইউটিলিটি সার্ভিসেস’-কে ‘অপা ইউটিলিটি সার্ভিসেস’ও বলছেন। যেখানে পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অর্পিতা মুখোপাধ্যায় বিনিয়োগ
করেছিলেন। পার্থর ব্যাংকের বিস্তারিত খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অর্পিতার ৩১টি জীবন বিমায় নমিনি হিসেবে পার্থর নাম রয়েছে। ৯টা ফ্ল্যাট মিলেছে। আরও কিছু উদ্ধার হতে পারে, এ জন্য জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন।’এরপরেই ইডির আইনজীবী পার্থকে চার দিন
এবং অর্পিতাকে তিন দিনের জন্য হেফাজতে চান। পার্থর আইনজীবীরা পালটা যুক্তি দিয়ে বলেন, ‘অসুস্থ অবস্থাতেও তার মক্কেল তদন্তে সহযোগিতা করছেন। বর্তমানে তিনি আর মন্ত্রী নেই, তাই প্রভাব খাটানোর সম্ভাবনাও থাকছে না। পার্থর বাড়ি
থেকে কিছু পাওয়া যায়নি। তার কাছ থেকে কিছু না পাওয়া সত্ত্বেও তাকে জেরা করা হয়েছে। তাকে জামিনের অনুমতি দেওয়া হোক। প্যান কার্ডের সাহায্যেও তো অ্যাকাউন্টে নজরদারি করা সম্ভব। তা হলে কেন আবার পার্থকে চারদিনের
জন্য হেফাজতে নেওয়া হচ্ছে?এরপর তারা বলেন, ‘আদালত যদি অনুমতি দেয়, তবে বড়জোর পার্থকে আর দু’দিনের জন্য হেফাজতে নিতে পারে ইডি। এর বেশি নয়।’পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আইনজীবী দাবি করেন, ‘চোখের ওষুধ পাঠানো
হলেও, তা দিতে দেওয়া হচ্ছে না পার্থকে।’ইডির আইনজীবী পাল্টা বলেন, ‘অর্পিতা তাদের তদন্তে সহযোগিতা করলেও পার্থ সহযোগিতা করছেন না। উনি তো হেফাজতে নেওয়ার পর হাসপাতালেই ছিলেন দু’দিন। পার্থকে
জেরা করার যথেষ্ট সময়ই পাননি তদন্তকারীরা।’অন্যদিকে, অর্পিতার আইনজীবী নীলাদ্রি ভট্টাচার্য বলেন, ইডি হেফাজতের আবেদন গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ ইডি অর্পিতাকে সহযোগিতা করছে না, কিন্তু অর্পিতা সাহায্য করছেন।’অর্পিতার
নাম এফআইআরে নেই বলেও তিনি দাবি করেন। অর্পিতার আইনজীবী আবেদন করেন, ‘তার মক্কেলের সঙ্গে যেন দেখা করতে দেওয়া হয়।’এ কথা শুনে ইডির
আইনজীবী জানান, দশ মিনিট সময় দেওয়া যেতে পারে। তবে সঙ্গে থাকবেন ইডি কর্মকর্তারা। অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের আইনজীবী জানান, ওই সময়ে আলোচনা
সম্ভব নয়। তাদের যেন ২০ মিনিটের সময় দেওয়া হয়। ইডি কর্মকর্তারা তার দুই পাশে থাকবেন, প্রয়োজনে মাথায়ও বসতে পারেন। এ নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ বিবাদের পর ঠিক হয়, ইডির
উপস্থিতিতে এক জন আইনজীবী ১৫ মিনিট কথা বলার সুযোগ পাবেন। পরে পার্থর আইনজীবীরাও একই অনুরোধ মৌখিকভাবে করেন। দু’পক্ষের সওয়াল জবাবের পর
শেষ পর্যন্ত জামিনের আবেদন খারিজ করে দেয় ইডি আদালত। পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে চারদিন ও অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে তিনদিনের জন্য হেফাজতে নেওয়ার আবেদন বদলে ২ দিনের জন্য ইডি হেফাজত মঞ্জুর করে আদালত।